সুপারফুড হিসেবে বেশ জনপ্রিয় মরিঙ্গা। মূলত সজনেপাতা গুঁড়াকেই মরিঙ্গা পাউডার বলা হয়ে থাকে।এতে ভিটামিন এ, বি, সি, ই, আয়রন এবং জিঙ্কসহ খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। ত্বক ও চুলের যত্নে মরিঙ্গা বহুল ব্যবহৃত। তবে এর কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। যা নানা শারীরিক সমস্যাকে বিদায় জানাতে সক্ষম। আসুন জানি মরিঙ্গার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
সজনেপাতা গুড়া বা মরিঙ্গায় ভিটামিন সি এর পর্যাপ্ততা রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কার্যকর। এ ভিটামিন শ্বেত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে, যা সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়া মরিঙ্গাতে প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
* রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে মরিঙ্গাতে। এ উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সক্ষম। এছাড়া সজনেপাতায় বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে যা ইনসুলিন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে সাহায্য করে। তাইতো বলা হয়ে থাকে, নিয়মিত মরিঙ্গা বা সজনেপাতা খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের উপকার হতে পারে।
* হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে
মরিঙ্গা ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। এমনকি অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে এবং অন্ত্রের জন্য উপকারি ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সহায়তা করে। মরিঙ্গাতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা আলসার এবং গ্যাস্ট্রাইটিসের মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যাগুলোকে প্রশমিত করতে পারে।
* মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল রয়েছে মরিঙ্গাতে। যা মস্তিষ্কের কোষকে ফ্রি র্যাডিকেল দিয়ে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। উদ্ভিদের নিউরোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এতে। ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত মরিঙ্গা সেবন করলে অ্যালঝেইমার্স এবং পারকিনসনের মতো রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
* কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
মরিঙ্গায় এমন যৌগ রয়েছে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। উদ্ভিদটিতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ধমনীতে প্লেক তৈরিতে বাধা দেয়, এভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
* প্রদাহ কমায়
মরিঙ্গার প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
* ত্বক ভালো রাখতে
মরিঙ্গায় ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য কার্যকর পুষ্টি উপাদান। উদ্ভিদটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে। ময়শ্চারাইজিং এবং অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যের কারণে মরিঙ্গা তেল ত্বকচর্চার নানা পণ্যে ব্যবহার করা হয়।
অনেক পুষ্টিবিদের মতেই, শুধুমাত্র সজনে পাতা সম্পূর্ণভাবে প্রোটিনের দৈনিক চাহিদা মেটাতে পারে না। সজনের সঙ্গে অন্য শাকসবজি, ডাল জাতীয় খাবারও রাখতে হবে। যদি কেউ সুষম আহার করতে অভ্যস্ত হন, তা হলে রোজকার খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট নির্দিষ্ট পরিমাণে রাখা দরকার। মাছ-মাংস, ডিম বা দুধ না খেলে তার জায়গায় সজনে পাতা ছাড়াও বিভিন্ন দানাশস্য (গম, ওটস, বাজরা, মিলেট ইত্যাদি), ফল, সবুজ শাকসবজি রাখতেই হবে।
সজনেপাতায় এত বেশি ফাইবার থাকে যে, খুব বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেললে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই দুধ বা অন্য প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বিকল্প হিসেবে সজনে পাতা খাবেন কি না তা পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেওয়াই ভালো।