খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩৫ জনকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে মহানগরের সাতরাস্তা মোড়ে বিএমএ কার্যালয়ের সামনে থেকে শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা হয়। এর পর রয়্যালের মোড়, মডার্ন ফার্নিচারের মোড়, পিটিআই মোড় থেকে টুটপাড়া কবরস্থান মোড় পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা পিটিআই মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। এক পর্যায়ে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। কালবেলার খুলনা প্রতিনিধি বশির হোসেনও আহত হয়েছেন।
এর আগে দুপুর ১২টায় মহানগরের রয়্যাল মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি সফল করতে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। মিছিলের আগে ১৭ ছাত্রছাত্রীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।
পুলিশ মিছিলরত ছাত্রছাত্রীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে মহানগরের আহসানউল্লাহ কলেজের ভেতরে ছাত্রছাত্রীরা ঢুকে গেট বন্ধ করে দেন।
ময়লা পোতার মোড়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করতে চাইলে পুলিশের সাথে আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। পরে দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা আবারও জড়ো হয়ে ময়লা পোতা থেকে পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রয়্যালের মোড়ে যান।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার আমাদের ঘোষণা দেওয়া ছিল আর কোনো ছাত্রকে আন্দোলন করতে দেওয়া হবে না। তারা আইন নিজেদের হাতে নিয়েছে। আমাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হয়েছে। কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা মঙ্গলবার রাতে খুলনা সার্কিট হাউজে বৈঠকের পর আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল যুবক বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার বলেন, পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেলের আঘাতে কমপক্ষে ৬০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে। তাদের সন্ধ্যার মধ্যে মুক্তি দেওয়া না হলে আমরা স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হবো।