সরকারের জেদে এত প্রাণ ঝরল

সরকারের জেদে এত প্রাণ ঝরল

কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত যে আদেশ ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তাতে বৈষম্যের বীজ রয়ে গেছে এবং তাতে সরকারেরই বিজয় হয়েছে। বৈষম্যের এই বীজকে ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে বিষবৃক্ষ করার সুযোগ আছে।

কোটা নিয়ে ছাত্ররা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল বা অবস্থান নিয়েছিল, সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা জয়লাভ করেছে, এটা আমার কাছে মনে হয়নি। কেননা, সরকারের সুযোগ রয়েছে, এটাকে (কোটা) নিয়ে কিছু করার। অর্থাৎ সরকার এটাকে বাড়াতে-কমাতে পারে। অর্থাৎ বৈষম্যের যে বীজ, সেটা রয়ে গেছে।

এ ক্ষেত্রে সংবিধানও লঙ্ঘন হয়েছে। সংবিধানের ২৯ ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা আছে, দেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না, সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। সমাজের যে অংশটি পেছনে পড়ে আছে, তাদের টেনে আনার জন্য কিছু সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সরকার যদি চায় ওইটুকু ব্যবহার করতে পারে। এর বাইরে কিছু করার ক্ষমতা নেই।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের জন্য সরকারই দায়ী। বিষয়টি তো সম্পূর্ণ সরকারেরই সৃষ্টি করা। তাদের ব্যক্তিগত জেদ ছাত্র-জনতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়ার কারণে এটা হয়েছে। যেটার জন্য তারা সব রকম বল প্রয়োগ করেছে, অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। এখন শুধু সমস্যার সমাধান করে দিলাম, এতেই কি শেষ? সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে, জেদাজেদির কারণে, জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণে এত প্রাণ ঝরল। যে মায়ের কোল খালি হলো, যে পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল, এর দায়দায়িত্ব সরকারকে নেওয়া উচিত ছিল।

সরকার জনগণের আত্মদানের মূল্য উপেক্ষা করে যাচ্ছে। সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোনো পদক্ষেপ আসেনি, যাতে জনগণ আশ্বস্ত হতে পারে বা সান্ত্বনা নিতে পারে। বরং এটার একটা সমাধান সরকারকে বলে দেওয়া উচিত ছিল যে আমি এটার জন্য এই কারণে দুঃখিত এবং এই কারণে এটা করছি।

খালি পয়সা দিয়ে দেব, জীবনের দাম তো পয়সা দিয়ে হয় না। যে মা সন্তান হারিয়েছেন, তাঁকে লাখ-কোটি টাকা দিলেও তাঁর সন্তানের শূন্যতা পূরণ হবে না। সরকারের বক্তব্য এবং আচরণে যে ধরনের আন্তরিকতা বা সহানুভূতি থাকা উচিত ছিল, এটা আমরা দেখছি না; বরং ওনাদের আগের এজেন্ডাগুলো ওনারা বিভিন্নভাবে চালিয়ে যেতে চাইছেন।

জি এম কাদের, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS