চার দিন পর বিকল্প ব্যবস্থায় আমদানি–রপ্তানির নতুন চালান শুল্কায়নের কাজ শুরু হয়েছে। পণ্যের স্তূপ জমেছে বন্দরে।
একটানা চার দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার সীমিত পরিসরে আমদানি–রপ্তানির নতুন চালানের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে এসে ২২৪টি আমদানি–রপ্তানি চালানের নথি জমা দিয়েছেন ব্যবহারকারীরা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে এক দশক আগে পণ্যের শুল্কায়নে অনলাইনভিত্তিক অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থায় ঘরে বসে ব্যবসায়ীরা অনলাইনে আমদানি–রপ্তানির নথিপত্র জমা দিতেন। এরপর শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। কোটা আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন কোনো চালানের নথি জমা দিতে পারেননি ব্যবহারকারীরা। তাতে নতুন চালানের শুল্কায়নও বন্ধ ছিল।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সক্রিয় করা হয়। ব্যবসায়ীরা যাতে এই ব্যবস্থায় শুল্কায়নের জন্য নথিপত্র জমা দিতে পারেন, সে জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে চারটি কম্পিউটারে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিকল্প ব্যবস্থায় এখন যে কেউ কাস্টমস হাউসে আমদানি–রপ্তানির চালানের নথি জমা দিতে পারবেন। কনটেইনার ডিপোগুলোতেও শুল্কায়ন কার্যক্রম চলছে। আবার জাহাজ যাতে সাগরে অপেক্ষা করতে না হয়, সে জন্য সনাতন পদ্ধতিতে আমদানির প্রাথমিক বিবরণীর তালিকা (আইজিএম) অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৩টি জাহাজের আইজিএম অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে জাহাজ থেকে জেটিতে পণ্য খালাসে বাধা নেই।
স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রতিদিন যে পরিমাণ পণ্যের চালান শুল্কায়ন হয়, নতুন ব্যবস্থায় সেই পরিমাণ শুল্কায়নের সুযোগ কম। কাস্টমস হাউসে প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার রপ্তানি চালান ও ১ হাজার ২০০–এর মতো আমদানি চালান শুল্কায়ন হয়।
আজ কাস্টমস হাউসে গিয়ে পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ কর্মীদের উপস্থিতি কম দেখা যায়। তবে কর্মকর্তারা অফিস করছেন। বিকল্প ব্যবস্থা চালু হলেও ব্যাংক বন্ধ এবং পরিবহনসংকটে এ ব্যবস্থার পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। শুল্কায়ন শেষে পণ্য খালাস নিয়েছে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান গালফ বিডি এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ওবায়দুল হক আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বস্ত্র খাত ও কাচশিল্পের পাঁচটি আমদানি চালানের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ করার পরও গাড়ি না পেয়ে খালাস করতে পারিনি।’
ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার আগে যেসব আমদানি ও রপ্তানি চালানের নথিপত্র অনলাইনে জমা দেওয়া হয়েছিল কিংবা শুল্কায়ন হয়েছে, সেসব চালানের বড় অংশই আটকে ছিল এত দিন। এখন এসব চালান শুল্কায়নের প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করছে কাস্টমস।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, সোমবার ৯ হাজার ৭১৪টি রপ্তানি চালানের শুল্কায়ন হয়েছে। এসব চালানে থাকা ১৮ হাজার ৮০৯ টন পণ্য রপ্তানিও হয়েছে। এসব চালানের সিংহভাগ ইন্টারনেট সেবা বন্ধের আগে অনলাইনে নথি দাখিল করা হয়েছিল। আর ৫৫টি আমদানি চালানের শুল্কায়ন হয়েছে। এসব চালানে থাকা ৭৬ হাজার ৫০০ টন পণ্য খালাস হয়েছে।
গত রোববার ও সোমবার বন্দর চত্বর থেকে কনটেইনার খুলে কোনো পণ্য খালাস হয়নি। শুধু বন্দর থেকে বেসরকারি ডিপোতে নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫২৫ একক কনটেইনার। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে নেওয়া হয়েছে ৬৫ কনটেইনার। বন্দর চত্বর থেকে পণ্য খালাস কমে আসায় বন্দরে কনটেইনার রাখার জায়গা কমে আসছে। বন্দরে আমদানির ৪২ হাজার ১২০ একক কনটেইনার রাখার জায়গা আছে। সেখানে গতকাল মঙ্গলবার কনটেইনার ছিল ৪০ হাজার। এ অবস্থায় নতুন করে যেসব জাহাজ বন্দরে আসছে, সেগুলো থেকে কনটেইনার নামানো–ওঠানো ও স্থানান্তর কার্যক্রমেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
অবশ্য বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস চলছে। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বহির্নোঙর থেকে সোমবার পণ্য খালাস হয়েছে ৭৯ হাজার টন। রোববারে খালাস হয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজার টন।
বন্দরের পাশাপাশি ডিপোতেও রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার পড়ে আছে। আবার কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে আনা রপ্তানি পণ্যবাহী গাড়িও আটকে আছে। জানতে চাইলে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রথম আলোকে জানান, শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পাঁচ হাজার কনটেইনার ডিপোতে আটকে আছে।