কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে মাদক ও গরু চোরাচালানে পুলিশ জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, রৌমারীর ওসি গরু চোরাচালানে মাথাপিছু ‘রেট বাড়িয়েছেন’।
সাবেক প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের ভিডিও রোববার (২৩ জুন) ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (২৩ জুন) বিকেলে রৌমারী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক আলোচনা সভায় এমন বক্তব্য দেন মো. জাকির হোসেন।
চার মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিওতে মো. জাকির হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘সীমান্তে গরু আসে নদী পথে, গরু আসে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপর বাঁশের তৈরি আড়কির (বাঁশের তৈরি যন্ত্র) মাধ্যমে। মাথাপিছু গরুর টাকা নেয় কে এবং কে খায়? আগের ওসির এক রেট ছিল, এই ওসি (আবদুল্লা হিল জামান) এসে রেট বাড়ায় দিছে। ’
তিনি বলেন, ‘নদী পথে ছোট ছোট (ডিঙি) নৌকাগুলোয় করে মাদক আসে। কোনো কোনো সময় কামলা (মাদকদ্রব্য আনা-নেওয়া শ্রমিক) আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও মাদকের গডফাদাররা ধরা পড়ে না কেন? গডফাদারদের ইদানীং থানার বারান্দায় দেখা যায়। পাশাপাশি দারোগাদের ঘাড় ধরে ঘুরে বেড়ায়। ’
রৌমারী এখন মাদকের সাম্রাজ্য উল্লেখ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানকার মাদক কারাবারিরা কোটিপতি। ব-কলম হয়েও শুধু টাকার জোরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন অনেকেই। এখানে উপস্থিত সবার খবর জানি আমি। হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে কারা কারা জড়িত সবাই জানেন, কিন্তু কেউ বলেন না। আমার মুখ খোলাইয়েন না। ভালো হয়ে যাই সবাই। ’
সভায় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান সামসুল দোহা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান, রৌমারী থানার ওসি (তদন্ত) মুশাহেদ খান, রৌমারী বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবদুর রাজ্জাক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) রাজু আহমেদ প্রমুখ।
সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে রৌমারীর ওসি মুশাহেদ খান বলেন, ‘পুলিশ গরু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মাদকের বিষয়টি পুলিশের কাছে গডফাদার ও কামলা বলে কিছু নেই। আমরা যখন যার কাছে মাদক পাই, তখন তাকে আটক করি। এক্ষেত্রে কেউ যদি গডফাদারদের তথ্য দেয়, তবে আমরা সেখানেও অভিযান চালাব। ’
কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে চোরাচালানে পুলিশের সম্পৃক্ততার কোনো সুযোগ নেই। সীমান্তের আট কিলোমিটার এলাকায় পুলিশ যেতে চাইলে বিজিবিকে অবগত করে তবেই সেখানে যেতে হয়। সেখানে পুলিশ কীভাবে চোরাচালানে সহযোগিতা করবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাচাই করে দেখা হবে বলে জানান এসপি আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম।