যেকোনো ব্যক্তি জীবনের যেকোনো পর্যায়ে বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সাময়িক স্বাভাবিক দুঃখবোধের চেয়ে আলাদা আবেগসংক্রান্ত বিশেষ এই মানসিক অসুস্থতা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনযাপনকে বাধাগ্রস্ত করে।এই অবস্থা দূর করতে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুনতাসীর মারুফ, সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।
বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ই মন প্রচণ্ড খারাপ বা ভার হয়ে থাকে। যেসব ঘটনা বা সংবাদে স্বাভাবিক অবস্থায় মন ভালো বা প্রফুল্লবোধ হয়, সেসবে রোগীর মানসিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। এর পাশাপাশি আরও যেসব সমস্যা হয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম—
* দৈনন্দিন কাজকর্মে আগ্রহের অভাব
* আনন্দ বা উৎসাহ না পাওয়া
* অনিদ্রা
* খাবারে অরুচি
* ওজন কমে যাওয়া
* মনোযোগ কমে যাওয়া
* সিদ্ধান্তহীনতা
* নেতিবাচক চিন্তা
* হতাশা
* আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া
* অযৌক্তিক বা অতিরিক্ত অপরাধবোধ
* অস্বাভাবিক ক্লান্তি
* দুর্বলতা
* চিন্তা ও কাজের গতি ধীর হয়ে যাওয়া
* মৃত্যুচিন্তা
* আত্মহত্যার প্রবণতা
উপসর্গের বেশির ভাগই টানা দুই সপ্তাহের বেশি হলে এটিকে মেজর ডিপ্রেসিভ ডিস-অর্ডার বা গুরুতর বিষণ্ণতা রোগ বলা হয়।
চিকিৎসা
বিষণ্ণতা রোগের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। বিষণ্ণতার উপসর্গ দেখা দিলে রোগ এবং এটির তীব্রতা নির্ণয়ের জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। রোগের তীব্রতাভেদে ওষুধ, সাইকোথেরাপি বা উভয় পদ্ধতিতেই চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসাপদ্ধতির ধরন অনুযায়ী সাইকিয়াট্রিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বা প্রযোজ্য মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীর তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
যেমন:
* মনকে বিষণ্ণ করে বা মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে, এমন কথা, কাজ বা সঙ্গ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
* বিষণ্ণতার সময় জীবনের বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
* নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে।
* সুষম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে।
* পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে।
* ইতিবাচক পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
* ধূমপান ও মাদক থেকে বিরত থাকতে হবে।
* রুটিনমাফিক শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করতে হবে।