প্রায় দুই কোটি টাকার জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ডিজিএম আব্দুল হাই ভূইয়া এবং তার স্ত্রীর নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (৩ জুন) কুমিল্লার দুদক কার্যালয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, অসৎ উদ্দেশ্যে এক কোটি ৭৭ লাখ ৯৭ হাজার ৭শ ৯৩ টাকার জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ আঞ্জুমান আরা বেগম তার স্বামী আব্দুল হাই ভূইয়ার অবৈধ সহায়তায় অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে এবং আঞ্জুমান আরা বেগম দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে সম্পদের মিথ্যা তথ্য/হিসাব দিয়ে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারামতে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আঞ্জুমান আরা বেগমের প্রতি সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হলে অতঃপর তার পূরণ করা সম্পদ বিবরণী একই বছরের ৬ মার্চে নিজ সই দাখিল করেন।
পরে কমিশনের অনুমোদনক্রমে সম্পদ বিবরণী যাচাই/অনুসন্ধানকালে দেখা যায় যে, আঞ্জুমান একজন গৃহিণী এবং তার স্বামী আব্দুল হাই ভূইয়া কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপব্যবস্থাপক হিসেবে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত)।
আসামি আঞ্জুমান আরা বেগমের নিজ নামে মোট এক কোটি ৭২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৮ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং মোট ৮৩ লাখ ৬১ হাজার ৫২ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অর্থাৎ তিনি সর্বমোট দুই কোটি ৫৬ লাখ ৩৬ হাজার এশ ৪০ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
ওই নারীর আয়কর নথি অনুযায়ী, তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ৩৫ লাখ ৫ হাজার ৭৯৩ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ৯১ লাখ ৪১ হাজার ৯৩৩ টাকা। তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী ফরমের স্থাবর অংশে ছয় শতাংশ জমি এবং ওই জমিতে চারতলা নির্মাণাধীন একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেন।
ওই্ ছয় শতাংশ জমি তার মায়ের কাছ থেকে হেবা সূত্রে প্রাপ্ত দলিল নং ৩৭১৮/১৯৯৯ মূলে অর্জন করেন। তবে সম্পদ বিবরণী ফরমে ওই বাড়ির কোনো নির্মাণ ব্যয় উল্লেখ করেননি। যাচাই/অনুসন্ধানকালে নিরপেক্ষ প্রকৌশলী টিম বাড়িটি পরিমাপ অন্তে এই ভবনের নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করেন এক কোটি ৭২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৮ টাকা। এছাড়া তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর অস্থাবর অংশে মোট ৮০ লাখ ৬১ হাজার ৫২ টাকার কথা উল্লেখ করলেও যাচাই/অনুসন্ধানকালে মোট ৮৩ লাখ ৬১ হাজার ৫২ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি ৭২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৮ টাকার স্থাবর সম্পদ ও তিন লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের গোপন ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় আসামি আঞ্জুমান আরা বেগম এবং তার স্বামী (২ নম্বর আসামি) তাকে ওই সম্পদ অর্জনে সহায়তা করায় দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় আজ তাদের নামে মামলা দায়ের করা হয়।