বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাপ পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার মো. খালেদ হোসেন স্বপনের বক্তব্যকে ঘিরে বিপাকে পড়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি (বরিশাল বিভাগ) অ্যাডভোকেট এইচ এম তসলিম উদ্দিন।
এরই মধ্যে শনিবার (১ জুন) বেলা ১১টায় শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন যুবদল নেতা তসলিম উদ্দিন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার মো. খালেদ হোসেন স্বপন প্রত্যাশার সুরে বলেছেন, বাংলাদেশের কোথাও বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও আমরা এরই মধ্যে জেনেছি জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম ভাই ৫ থেকে ৭ শত লোককে ফোন দিয়েছেন এ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও আনন্দময় করার জন্য। এ কারণেই বাবুগঞ্জে উৎসব মুখর নির্বাচন হবে জানিয়ে ওই ভিডিওতে আরও বলেন, ফোন দেওয়ার পাশাপাশি সে (যুবদল নেতা তসলিম উদ্দিন) নিজেও একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এজন্যই বাবুগঞ্জের নির্বাচনটা ব্যতিক্রমধর্মী হবে। কারণ এ নির্বাচনে বিএনপিও ভোট দিতে যাবে সেই আশ্বাসই জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম ভাই বলেছেন। মোবাইল ফোনে তিনি বলেছেন, যার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
তবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা যুবদল দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচ এম তসলিম উদ্দিন বলেন, গত ২৯ মে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অবৈধ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী খালেদ হোসেন স্বপন একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বিভ্রান্তিমূলক, ভিত্তিহীন এবং কল্পনা প্রসূত একটি সাক্ষাৎকার উপস্থাপন করেন। যা মোটেও সত্য নয় এবং যার সঙ্গে আমি, বিএনপি, যুবদল এবং সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরই মধ্যে বাবুগঞ্জ উপজেলা যুবদল এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ঘৃণাভরে তার এমন ভিত্তিহীন বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন, বিনা ভোটের এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার আমিসহ সারা বাংলাদেশের লক্ষাধিক নেতাকর্মী মিথ্যা ও গায়েবি মামলার শিকার হয়েছেন। যেখানে আম সহ অসংখ্য নেতাকর্মী মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছি এবং সারা বাংলাদেশে অনেক নেতাকর্মী গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন এ প্রেক্ষাপটে অবৈধ সরকারের অধীনে দেশ নায়ক তারেক রহমানের সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমি এবং সারা বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা এ অবৈধ সরকারের অধীনে সব প্রকার নির্বাচন বর্জনসহ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।
তসলিম বলেন, বাবুগঞ্জ উপজেলা একটি বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। এখানকার জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে এবং তারা অতীতের ন্যায় এখনও দুর্বার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ। বিগত ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যতগুলো মিথ্যা ও গায়েবি মামলা হয়েছে এবং নেতাকর্মীরা যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেগুলো বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খালেদ হোসেন স্বপনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও নির্দেশেই সম্পন্ন হয়েছিল। সেই গায়েবি ও মিথ্যা মামলাগুলোতে অত্র অঞ্চলের বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছেন।
বর্তমান অবৈধ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী তার বিগত দিনের অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা থেকে জনগণকে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করার অপকৌশল হিসেবে একটি বিভ্রান্তিমূলক কল্পনা প্রসূত বানোয়াট ভিডিও বার্তা উপস্থাপন করেন। যে বক্তব্যে আমাকে বিতর্কিত করতে এবং আমার সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রয়াসে ও বিএনপি সমর্থিত জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও ভোটমুখি করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং বরিশাল জেলা যুবদলের পক্ষ থেকে দলের একজন কর্মী হয়ে এ ভিডিও বার্তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলেরসহ সাধারণ সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) মাসুদ হাসান মামুন, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন পিপলু, বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন রেজা খানসহ যুবদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা।
এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার মো. খালেদ হোসেন স্বপনকে নিয়ে জাতীয় পার্টিতেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি। উপজেলার নেতারা স্বপনকে প্রকাশ্য সমর্থন দিলেও আবার ইউনিয়ন নেতারা তার বিরোধিতা করছেন। আবার স্বপনের প্রতিদ্বন্দ্বী একমাত্র প্রার্থী ফারজানা বিনতে ওহাবকে নিয়ে গণসংযোগ চালিয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা।