শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুতুল খেলা চলছে, অভিযোগ অভিভাবকদের

শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুতুল খেলা চলছে, অভিযোগ অভিভাবকদের

সরকার একমুখী সমন্বিত শিক্ষা কারিকুলাম চালু করে কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে পুতুল খেলা খেলছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।

শুক্রবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সচেতন অভিভাবক সমাজ আয়োজিত এক মানবন্ধনে এ অভিযোগ করেন তারা।কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, মেধা ও নৈতিকতা ধ্বংসকারী শিক্ষাক্রম- ২০২১ এর মাধ্যমে সন্তানদের সার্বিক শিক্ষাজীবন নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরূপ আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে এবং অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ প্রতিবাদকারীদের হয়রানি করায় তারা এ মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে অভিভাবকরা বলেন, শিশুরা ছোটবেলায় পুতুল খেলা খেলতে অভ্যস্ত। আজ সরকার যেন কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমনই পুতুল খেলছে। শিশুদের পুতুল খেলার মধ্যে তাদের আবেগ-বিবেক কাজ করে, তারা সেই খেলার মাঝেই হাসে-কাঁদে। কিন্তু আজ এদেশের কোটি কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন নিয়ে যারা পুতুল খেলছে, তাদের কোনো আবেগ-বিবেক নেই। তারা সম্পূর্ণ সজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় এ ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করছে। আপনারা জানেন এসব যজ্ঞ শুরুর সময় তারা অনেক আশার কথা শোনায় এবং সেটা ব্যর্থ হলে আবার আরেকটা হাজির করে।

তারা আরও বলেন, গতবছর ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সাধারণ ধারার শিক্ষায় প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে একমুখী সমন্বিত শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। এ বছর তা দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম এবং নবম শ্রেণিতে চালু হয়েছে, এবং ২০২৫ সালে এটা চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে। এরপর ২০২৬ ও ২০২৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে।

এ কারিকুলামের কারণে আমাদের শিক্ষার মানের যে আরও পতন হবে সে-বিষয়ে সচেতন শিক্ষাবিদ, শিক্ষকসহ দেশ-বিদেশের বহু মানুষ কারিকুলাম প্রণয়নের সময় থেকেই বলে আসছিলেন, লিখে আসছিলেন এবং নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু সরকার সে কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি।

অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, আজ কারিকুলাম চালু হওয়ার দেড় বছরের মাথায় সারাদেশের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে, তথাকথিত স্মার্ট নাগরিক বানানো, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বানানোর এ কারিকুলামের মাধ্যমে যেটুকু লেখাপড়া ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। প্রতিদিন নিত্য-নতুন নির্দেশনা দেওয়া ও বাতিল করা, কীভাবে পরীক্ষা হবে এবং মূল্যায়ন হবে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা ও হ-য-ব-র-ল নির্দেশনায় ছাত্র-শিক্ষকরা আজ অসহায়, অভিভাবকরা নিরুপায়, বিপন্ন।

তারা আরও অভিযোগ করেন, আগেরটা কারিকুলাম কেন ব্যর্থ হলো, এর জন্য কে দায়ী, কে জবাবদিহি করবে, এ ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে-এ বিষয়ে তখন তারা (সরকার) বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু সন্তানের শিক্ষার এ ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখে যখন অভিভাবক, শিক্ষক বা সচেতন মহল কথা বলেন, প্রতিবাদ করেন তখন কিন্তু তারা জেগে ওঠে। তারা তখন রাতের আঁধারে অভিভাবকদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে মিথ্যে মামলা সাজিয়ে জামিন না-মঞ্জুর করে হাজতখানায় পাঠিয়ে দেয়। তাদের প্রতিবাদ আয়োজন ভণ্ডুল করে দেয়। নিতান্ত স্বাক্ষর সংগ্রহের মতো নিরীহ কর্মসূচিতেও তারা পুলিশ ও গুণ্ডাপাণ্ডা নামিয়ে পণ্ড করে দিতে চায়।

তারা আরও বলেন, এ যে পরিস্থিতি এ থেকে আমরা অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজ নিষ্কৃতি চাই। আমাদের সন্তানের জন্য ভালো মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আগে ভালো শিক্ষক দরকার, তাদের ভালো বেতন দরকার, ভালো প্রশিক্ষণ দরকার, তাদের স্বাধীনতা দরকার, স্কুল-কলেজের ওপর থেকে দুর্বৃত্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির অপসারণ দরকার, প্রশাসনিক হয়রানি থামানো দরকার। কিন্তু তা না করে প্রতিনিয়ত শিক্ষার উন্নয়নের নামে যা করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার আরও পতন ঘটছে। আমাদের সন্তানরা শেষ হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে আমাদের শিক্ষার মান একেবারে নিচে চলে গেছে। এমনকি যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে লাখ লাখ মানুষের রক্তদানের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, আজ সে পাকিস্তানের চেয়েও আমাদের শিক্ষার মান অনেক নিচে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কি হতে পারে!

এ সময় তারা শিক্ষার মানের এ ধারাবাহিক পতনের পথ থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানান। এর জন্য অবিলম্বে সমন্বিত একমুখী শিক্ষা কারিকুলামের নামে শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার সঙ্গে পুরোপুরো বেখাপ্পা ও ধ্বংসাত্মক এ কারিকুলাম বাতিলের দাবি জানান।

সচেতন অভিভাবক সমাজের সভাপতি মুসলিম বিন হাইয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত ও অভিভাবক ডা. আরিফ মোর্শেদ খান।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS