এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের জন্য নগরের টাইগারপাস থেকে রেলওয়ে পাবলিক হাইস্কুল গেট পর্যন্ত সড়কের মাঝখানে থাকা বেশ কিছু ছোট-বড় গাছ কাটবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য এরইমধ্যে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে, চিহ্নিত করা হয়েছে মৃত্যুর পরোয়ানাপ্রাপ্ত শতবর্ষী গাছগুলো।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের কাছে ৪৭টি গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে সিডিএ। এর প্রেক্ষিতে বন বিভাগ ৪৬টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে।এছাড়া গত ২৫ মার্চ পলোগ্রাউন্ড উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়ক থেকে দেওয়ানহাটমুখি র্যাম্প নির্মাণের জন্য ১৪ শতক জায়গা ব্যবহারের জন্য রেলওয়ের অনুমতি চেয়েছে সিডিএ। আবেদনে কয়টি গাছ কাটতে হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস স্বাক্ষরিত আবেদনে আগ্রাবাদ ঢেবারপাড় এলাকায় বিমানবন্দরমুখি র্যাম্প নির্মাণের জন্য ২১ দশমিক ৭৭ শতক জমি ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়। এতে ছোট-বড় ৫৯টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’তে ওঠানামার জন্য র্যাম্প থাকবে ১৫টি। এর মধ্যে আগ্রাবাদে ৪টি, জিইসি মোড় ও ফকিরহাটে একটি করে এবং টাইগারপাস, নিমতলা, সিইপিজেড ও কেইপিজেড এলাকায় দুটি করে র্যাম্প থাকবে। আগ্রাবাদ এলাকায় জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে ১টি, ঢেবারপাড় সড়কে ১টি এবং আগ্রাবাদ অ্যাক্সেস সড়কে হবে ২টি র্যাম্প।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এস এম কায়সার বলেন, সিডিএ ৪৭টি গাছ কাটার অনুমতি চেয়েছিল। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ৪৬টি গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বড় ৩টি রেইনট্রি রয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, সিডিএ আমাদের কাছে জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে। পূর্ব রেলের ডিআরএম এর নেতৃত্বে সাত সদস্যের বিভাগীয় কমিটি জমি পরিদর্শন করবে। সেখানে কি পরিমাণ জমি আছে, কত গাছ আছে, গাছ কাটা হবে কিনা- সব বিষয় যাচাই করে প্রতিবেদন দেবে। এরপর তা অনুমোদনের জন্য সদর দপ্তরে যাবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন বলেন, এই সড়কটি আইকনিক সাইট। এ ধরনের সাইট পরিবর্তন করা যায় না। ড্যাপে সিআরবি এলাকাকে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এলাকা হিসেবে সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। এটা সংরক্ষণের দায়িত্ব সিডিএ’র।
এদিকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটার ফলে দৃষ্টিনন্দন সড়কও নষ্ট হয়ে যাবে উল্লেখ করে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, গাছগুলো না কেটে দৃষ্টিনন্দন সড়কের সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রেখে র্যাম্প নির্মাণ করা হোক। চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধংসের অপচেষ্টা মানুষ মেনে নেবে না। প্রয়োজনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে আন্দোলন চলবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘র্যাম্প নির্মাণের জন্য ৪৪টি গাছ কাটা হবে। গাছ কাটার অনুমতি পাওয়া গেছে। রাস্তা ঠিক রেখে পিলারের মাধ্যমে র্যাম্প নামানো হবে। আমরা টাইগারপাসেও পাহাড় কেটে র্যাম্প নামিয়েছি’।