অপরিচিত নম্বর থেকে একের পর এক ফোনে উদ্বিগ্ন গ্রাহক
বিগত বছরগুলোয় জিনের বাদশা, বিকাশ নাহিদসহ বিভিন্ন নামে প্রতারণা করে লোকজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ শোনা যেত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান, গ্রাহকদের সচেতনতার কারণে এই প্রতারণাগুলো কমে এসেছে। কিন্তু থেমে নেই প্রতারক চক্র। তারা এখন অভিনব ফাঁদ পেতেছে। অপরিচিত বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে ইংরেজিতে কথা বলে চাকরিপ্রাপ্তির সুখবর দেওয়া হচ্ছে। বেতন বলা হচ্ছে ডলারে। চাকরি পেতে হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে বলা হচ্ছে।
টেলিকম খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো বেশির ভাগ স্পাম কল। লোকজনকে বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেই প্রচারক চক্র এই কারসাজি করছে। তারা বলছেন, সচেতন হলে এই প্রতারণা থেকে বাঁচা সম্ভব। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
রোজার পাশাপাশি ব্যাংকের চাকরি তাই বেশ ক্লান্ত মালিবাগের বাসিন্দা রায়হান। রাতের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। ফোন নম্বরটা একটু অদ্ভূতুড়ে। কল ধরেননি। পরপর কয়েকদিন এমন অপরিচিত কয়েকটি নাম্বার থেকে ফোন আসতে থাকে। গত বুধবার অফিসে থাকাকালে দুপুরেও ওই অদ্ভূতুড়ে নম্বরের ফোন আসে। বিরক্ত হয়ে ফোন ধরলে ওপাশ থেকে অস্পষ্ট কথা শোনা যায়। কেটে দিয়ে কল ব্যাক করার চেষ্টা করলে নাম্বার বন্ধ দেখায়। সেদিন রাতেই আবার ফোন আসে খাপছাড়া ডিজিটের একটি নম্বর থেকে। ফোন ধরার ৫-৬ সেকেন্ড পর একজন নারী ইংরেজিতে প্রশ্ন করে– আপনি কি ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন? রায়হান হ্যাঁ বলার পর অপর পাশ থেকে কথা বলা শুরু করে। প্রাথমিক কিছু কথার পরই ওই নারী বলে তার (রায়হান) জন্য একটা চাকরির অফার আছে। ঘরে বসে চাকরি করতে পারবেন। মাসে ২ হাজার ডলার দেওয়া হবে।
রায়হান জানতে চান কী ধরনের চাকরি? উত্তরে জানানো হয়, ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কন্টেন্ট তৈরি, ডাটা এন্ট্রি, পণ্যের বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। শেষে বলে চাকরিতে আগ্রহী হলে ১ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। সন্দেহ হওয়ায় রায়হান ফোন কেটে দেন।
গত বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই অপরিচিত নম্বর থেকে রায়হানের মতোই চাকরির অফার পাওয়ার অভিযোগ করছেন। সব ফোনেই অপর প্রান্ত থেকে ইংরেজিতে আলাপ-আলোচনার কথা জানা গেছে। এ নিয়ে গ্রাহকরা বেশ উদ্বিগ্ন। তারা তথ্য পাচার হওয়ার শঙ্কা করেছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির সমকালকে জানান, তিনি নিজেও এমন ফোন পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ইংরেজিতে কথাও বলেছেন। তিনি চাকরি পেয়েছেন এমন অফার করে ১ হাজার টাকা ফি দিয়ে নিবন্ধন করতে বলা হয়। সুমন আহমেদ বলেন, আগে যেমন জিনের বাদশা পরিচয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হতো, এগুলোও সেই প্রতারকদের কাজ। এই প্রতারণা রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি বিটিআরসিকে সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
মোবাইল অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদুল আলম সমকালকে বলেন, এই স্পাম কলগুলো তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে না। সেই শঙ্কা নেই। তবে প্রতারণা করতে পারে। এ ধরনের অভিযোগ পেলে তারা তদন্ত করে নম্বরগুলো বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। সন্দেহজনক নম্বর থেকে ফোন এলে রিসিভ করার প্রয়োজন নেই। তাহলে জালিয়াতি কমবে।
এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব সামসুল আরেফিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। বিটিআরসি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ ফোন ধরে অনুষ্ঠানে রয়েছেন বলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে ফোন দেওয়া হলেও তাঁকে আর পাওয়া যায়নি।