ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রাতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে ভোগান্তি পোহাতে হতো মধ্যরাতের যাত্রীদের। স্টেশনে থাকার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ ভোগান্তি বাড়ত আরও বেশি।এ ভোগান্তি কমাতে স্টেশন চত্বরেই রাত্রিযাপনের সুব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারের দিকে যেতে হাতের বামে স্টেশনের প্রথম ভবনের নিচে হোটেলটির প্রবেশপথ। সেখানে যাত্রীদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে দুজন ম্যানেজার কাজ করেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন দুজন সহকর্মীও। আগেও চালু ছিল এই হোটেল। তবে এবারের জানুয়ারিতে কিছুটা সংস্কার করে এ হোটেল সেবা আবারো চালু করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রধান রেলওয়ে স্টেশনের প্রশাসনিক ভবনটি তিনতলা। এর মধ্যে রয়েছে বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষও। রেলওয়ের আবাসিক হোটেলে মোট ১৬টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষ শুধুমাত্র হোটেলের কর্মচারীরা ব্যবহার করেন। আর বাকি ১৫টি কক্ষ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সাতটি কক্ষে রয়েছে এসি ও ফ্যান। আর বাকি আটটি কক্ষে শুধু ফ্যান রয়েছে।
চারজন থাকতে পারেন, এমন এসি কক্ষ রয়েছে পাঁচটি। এসব কক্ষের ভাড়া দুই হাজার টাকা। দুজন করে থাকতে পারেন এমন কক্ষ রয়েছে দুটি। এসব কক্ষের ভাড়া এক হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে এসিবিহীন কক্ষ আটটি। এসবের ভাড়া এক হাজার টাকা করে। প্রতি কক্ষে দুজন করে থাকতে পারেন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বল্প খরচে এসব কক্ষে রাত্রিযাপন করতে পারবেন যাত্রীরা। এটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম সেল (বিআরসিটিসি)।
হোটেলের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে— খাট, টি-টেবিল, সোফা, ড্রেসিং টেবিল, টেলিভিশন ও কাপড় রাখার জায়গা।
ওয়াশরুমগুলোতে রয়েছে— বালতি, মগ, হাই-কমোড, বেসিনসহ আয়না। এ ছাড়া প্রতি অতিথির জন্য দেওয়া হয় সাবান, শ্যাম্পু ও দাঁত মাজার জন্য পেস্ট। খাওয়ার জন্য রয়েছে বিশুদ্ধ পানি।
এ ছাড়া হোটেলের পক্ষ থেকে ফ্রিতে লন্ড্রি সুবিধাও দেওয়া হয়। নিরাপত্তার জন্য হোটেলে রয়েছে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা। একইসঙ্গে রয়েছে ফ্রি ইন্টারনেটসহ ওয়াই-ফাই সুবিধা।
হোটেলের ম্যানেজার মো. শাহীন রেজা বলেন, হোটেলে শতভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা অতিথিদের বিশুদ্ধ পানি দিয়ে থাকি। এখানে বাজে কোনো লোকের আড্ডা নেই। পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর।
তিনি বলেন, আমরা রেলওয়ের নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে থাকি। বেশি ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ক্ষেত্রবিশেষে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম নিয়ে থাকি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি নম্বর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। কেউ চাইলে ট্রেনে বসেই কল করে কক্ষ বুকিং করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আবাসিক হোটেলটি আগে তৃতীয় একটি পক্ষ ‘নিকুঞ্জ’ নামে পরিচালনা করত। বিশাল অঙ্কের বকেয়া থাকায় ২০২২ সালে রেলওয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে হোটেলটি বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এটি নতুন করে চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম সেল’।