জনগণের আমানতকে যারা খেলা মনে করে তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত: আদালত

জনগণের আমানতকে যারা খেলা মনে করে তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত: আদালত

দেশের জনগণের আমানতকে যারা খেলো মনে করেন, তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা দেওয়া উচিত। হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ এবং তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের মামলার রায়ে আদালত এই পর্যবেক্ষণ দেন।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এ মামলার রায় দেন। রায়ে ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, অত্র মামলার বিষয়টি দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করেন, তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

রায়ে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় তানভীর ও জেসমিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় সাত বছর কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহম্মেদ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগণ গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি আব্দুল মালেক এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান। যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি তাদের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া প্রতারণরা আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মামলার অন্য সাত আসামি সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ সাত কর্মকর্তাকে পৃথক দুইটি অভিযোগে ১৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারা হলেন- সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, সাবেক জিএম ননী গোপাল নাথ, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক জিএম মীর মহিদুর রহমান, ডিএমডি মাইনুল হক, উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ, এজিএম কামরুল হাসান খান ও সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা মেরী। তাদের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। আর প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

এছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারকে এক ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে জামাল উদ্দিন ও আলতাফ হোসেন জামিনে ছিলেন। তবে আজ হাজিরা দিলেও রায়ের সময় তিনি পালিয়ে যান। আসামি সাইফুল ইসলাম, আবদুল মতিন, হুমায়ুন কবির, গোপাল নাথ, তসলিম, সাইফুল হাসান, মেহেরুন্নেসা ও জাকারিয়া পলাতক আছেন। তানভীর, তুষার, জেসমিনসহ অপর আটজন কারাগারে আছেন।

এ মামলায় প্রথম দফায় রায় ঘোষণার জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য ছিল। তবে সেদিন মামলাটি রায় থেকে উত্তোলনপূর্বক ফের দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন করেন দুদক কৌসলী মীর আহমেদ আলী সালাম। সেই আবেদন মঞ্জুর করে ৪ মার্চ দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রাখা হয়। সেদিন সাক্ষ্য দেন তৎকালীন দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান ও কেশব রায় চৌধুরী। এরপর পুনরায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১২ মার্চ দিন ধার্য করা হয়। আজ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ১৯ মার্চ ফের রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ভুয়া ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসাবে সুতা রপ্তানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রপ্তানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। যা পরে তানভির ও তার স্ত্রী তুলে নেন।

চার্জশিট দাখিলের পর ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরবর্তীতে বিচারের জন্য মামলাটি হয়ে এই আদালতে আসে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS