মিরপুর-১২ নম্বরের কালশির ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ৫৯৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। ভয়ভীতি উপেক্ষা করেই তিনি মাংস বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রেতারা সারিতে দাঁড়িয়ে উজ্জলের দোকান থেকে মাংস সংগ্রহ করছেন। পাশেই কম দামে মাংস বিক্রি করা উজ্জল দাঁড়িয়ে আছেন।
বেলা এগারোটা থেকে মাংস বিক্রি শুরু হয়। দুপুর ১২টার মধ্যে দোকানের গরুর মাংস বিক্রি শেষ হয়ে যায়। ফলে আরও একটি জবাই করা হচ্ছিল।
মিরপুর ডিওএইচএস থেকে মোটরসাইকেলে আসা মেহেদী হাসান জানান, মিরপুরে অন্য কাজে এসেছিলেন তিনি। দীর্ঘ সারি থেকে তিনিও পাঁচ কেজি মাংস সংগ্রহ করেছেন।
মেহেদী বলেন, মিরপুরে অন্য কাজে এসেছিলাম। কাজ শেষ করে যাওয়ার পথে পাঁচ কেজি মাংস নিলাম। এখানকার মাংস আর শুধু কম দামেই মিলছে না, চোখের সামনেই গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করছে। এজন্য মাংস নিলাম।
তিনি বলেন, রোজার মাসে কম দামে মাংস বিক্রি করার ফলে এ অঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে কম আয়ের মানুষ মাংস খেতে পারছে।
কম দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে জেনে এক কেজি কিনতে এসেছেন কালশির আমেনা খাতুন। তিনি বলেন, সাত-আটশ টাকা কেজি দরের মাংসের ধারে কাছে যেতে পারি না। এখানে কম হওয়ায় এক কেজি কিনব।
পাশেই দাঁড়ানো মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যক্তি উজ্জ্বলের পরিবারের পরিচিত মানুষ। উজ্জ্বলকে ঘিরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে কামাল বলেন, কম দামে মাংস বিক্রি করার কারণে তিনি বেশি মাংস বিক্রি করছেন, বেশি লাভও করছেন। তার সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বলছেন। এটি তার সততা ও সাহসের জন্য। তার দাদা লতিফ কসাইও মাংস বিক্রি করতেন। ১০ কেজি মাংস নিয়ে সারাদিন বসে থাকতেন, বিক্রি হতো না। উজ্জ্বল প্রতিদিন ১০-১২টা করে গরু জবাই করছেন, বিক্রি হচ্ছে।
উজ্জ্বলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ৫৯৫ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি শুরু করেছি। মাঝে গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম একটু বাড়াতে হয়েছিল। রোজার মাসে আবারও আমি ৫৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করেছি। এতে কিছুটা লোকসান হলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।
অন্য ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সারা বছর আপনারা লাভ করেছেন। পবিত্র রমজান মাসে লাভ কম হলেও কম দামে মাংস বিক্রি করুন। এতে মানুষ খুশি হবে, আল্লাহ খুশি হবেন। এতে আপনাদের সওয়াব হবে।
কম দামে মাংস বিক্রি করতে গিয়ে কোন সমস্যায় পড়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। কিন্তু আমি পরোয়া করছি না। আমি বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছি। যে যাই বলুক, আমি আমার কাজ চালিয়ে যাব।
উজ্জ্বল বলেন, ৫৯৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করলে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩টি গরু জবাই করতে হয়। শুরুতে লোকসান না হলেও দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন কিছুটা লোকসান হচ্ছে। তবে যতদিন পারি, এভাবে কম দামে মাংস বিক্রি চালিয়ে যাব।
কম দামে গরুর মাংস বিক্রি দেখে উজ্জ্বলের সামনের দোকান শাহজালাল গোস্তবিতানও ৫৯৫ দরে বিক্রির জন্য সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে।