কাল থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। সিয়াম সাধনার এই মাস ঘিরে এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে রসালো ফল তরমুজ।তবে এখনও পরিপূর্ণ মৌসুম শুরু না হওয়ায় বাজারে ওঠা তরমুজ অপরিপক্ব। কিন্তু দাম বেশ চড়া।
সোমবার (১১ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ফলের আড়ৎ ও বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, অন্যান্য ফলের পাশাপাশি বাজারে ছোট ও মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। সেসব তরমুজের বেশিরভাগই অপরিপক্ব। আধা পাকা এসব তরমুজ কাটার পর কোনটি রং লাল দেখা যাচ্ছে, কোনটি আবার সাদা-লাল। কিছু কিছু তরমুজের স্বাদ মিষ্টি হলেও, বেশিরভাগই পানসে স্বাদের। হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে তরমুজ ওঠলেও এখনও বাজার সেভাবে সয়লাব হয়নি। আবার কারওয়ান বাজারের ফলের আড়ৎগুলোর মধ্যে মাত্র দুইটি আড়তে তরমুজ দেখা গেছে।
বাজারে ওঠা বেশিরভাগ তরমুজ অপরিপক্ব হলেও চাহিদা কম নয়। অনেক ক্রেতাকেই তরমুজ কিনতে দেখা গেছে।
মূলত, রমজানকে ঘিরে বাড়তি লাভের আশায় অনেক কৃষক পরিপক্ব হওয়ার আগেই তরমুজ বিক্রি করে ফেলছেন। যেগুলোর রং ও স্বাদ পরিপক্ব তরমুজের তুলনায় অনেক কম। তরমুজ এখনও পরিপক্ব না হলেও, দাম কিন্তু কম নয়। বরং বাড়তি দামে কেজি হিসেবে এই বাজারে তরমুজ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি তরমুজ ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একেকটি তরমুজের ওজন দুই কেজি থেকে প্রায় ছয় কেজি পর্যন্ত। গত বছর এই সময় একই আকারের তরমুজ ৪০-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। আরও ১৫-২০ দিন পর পরিপক্ব তরমুজ ওঠবে বলে জানান বিক্রেতারা। তখন দামও কমবে আবার আকারও বড় হবে।
এখন বাজারে ওঠা বেশিরভাগ তরমুজ অপরিপক্ব বলে স্বীকার করেছেন খোদ কৃষকরা। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে কারওয়ান বাজারের ফলের আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক মো. মিনহাজ। তিনি একটি ট্রাকে করে তার ক্ষেতের চার হাজার তরমুজ নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, যারা আগে আবাদ করেছিল, তারা আগে তরমুজ ক্ষেত থেকে তুলছে। তরমুজ এখনও পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি। তারপরও রমজানে যেহেতু তরমুজের চাহিদা থাকে, সেজন্য বাড়তি লাভের আশায় অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তবে আরও কয়েকদিন পর যেসব তরমুজ আসবে, সেগুলো পরিপক্ব হবে। কিন্তু তখন আর দাম পাওয়া যাবে না।
তরমুজের দাম গতবারের তুলনায় বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ডিসেম্বরের শুরুতে তরমুজ আবাদ করেছিলাম। যখন ফুল আসছিল, তখন হঠাৎ কয়েকদিন বৃষ্টি হয়। সেই বৃষ্টিতে অনেকের তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার অনেকে নতুন করে আবাদ করে। এজন্য এবার তরমুজের দাম বেশি। তবে কয়েকদিনের মধ্যে দাম কমে যাবে।
একই কথা বলেছেন কারওয়ান বাজারের আড়তদার ফাহাদ ফার্মের সত্ত্বাধিকারী মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজারে তরমুজ ওঠা শুরু হয়েছে। তবে বাজার তরমুজে সয়লাব হতে আরও কয়েকদিন লাগবে। এবার কৃষকের অনেক তরমুজ নষ্ট হয়েছে, যার কারণে দাম কিছুটা বেশি।
এক্ষেত্রে বাজারে সরবরাহ বাড়লে দামও কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
ফয়সাল নামের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, এবার তরমুজের দাম বেশি। গত বছর এই সময় ১০০ তরমুজ ১২-১৩ হাজার টাকা করে আড়ৎ থেকে কিনলেও এবার ২০-২৫ হাজার টাকা করে কিনতে হচ্ছে। আর খুচরা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে আমরা বিক্রি করছি। তবে এখন যেসব তরমুজ আসছে সেগুলো পরিপক্ব নয়। পরিপক্ব তরমুজ আসতে আরও ১৫-২০ দিন লাগবে।
বাজারে ওঠা তরমুজের বেশিরভাগই অপরিপক্ব- এই কথা ক্রেতারাও জানেন, বোঝেন। তারপরও এই বিষয়ে তেমন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের। তবে দামের বিষয়ে রয়েছে অসন্তোষ।
মো. জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, এখনও তো সিজন শুরু হয়নি। তাই তরমুজ ভালো হবে না, এটাই স্বাভাবিক। তারপরও আগামীকাল থেকে রোজা, তাই কিনতে এসেছি। ইফতারে তরমুজ অনেক উপকারে আসে। তবে দামটা গত বছরের তুলনায় বেশি মনে হয়েছে। তরমুজের এত দাম হওয়া উচিত নয়।
খুরশিদ আসমা নামের আরেক ক্রেতা বলেন, দামটা ৪০-৫০ টাকা হলে আমাদের জন্য ভালো হয়। কিন্তু তার থেক প্রায় দেড়-দুই গুণ দামে কিনতে হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো হয় পিস হিসেবে বিক্রি করলে। প্রতি বছর এটা নিয়ে অভিযান চলে। তারপরও কোনো পরিবর্তন হয় না।