ভারতীয় সিনেমা দেশে এসে সয়লাব করে দিচ্ছে। দুই দিনের মধ্যে সেন্সর হয়ে যাচ্ছে।এগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছুই না। যতদূর শুনেছি, শিল্পী সমিতি ও অন্য একটি সমিতি এর সঙ্গে জড়িত। ’
ভীনদেশি সিনেমা দেশের প্রেক্ষাগৃহে আমদানি প্রসঙ্গে এভাবেই বললেন দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অন্যতম অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা।
তিনি বলেন, ভারতীয় সিনেমা মুক্তি দিতে হলে তাদের (সমিতিকে) টাকা দিতে হয়। এটা চরম অন্যায়। এভাবে সমিতি টাকা নিয়ে বিদেশি কালচার আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এটা মানা যায় না।
রূপালি পর্দার ‘মাসুদ রানা’ বলেন, ভারতীয় সিনেমা আমাদের দেশে আসুক। আমরা আটকে থাকতে চাই না। আমাদের সিনেমাও ভারতে যাক। তবে যেসব সিনেমা সেখানে পাঠানো হয় যেগুলো আমাদের দেশেই চলে না। সেখানেও সেটি বস্তার মধ্যে পড়ে থাকে। আমাদের দেশে ১০ বছরে কি ভালো সিনেমা তৈরি হয়নি?
তিনি বলেন, শাকিবের ভালো-ভালো সিনেমা বাংলাদেশে নেই? যেগুলো ভারতে গিয়ে কাঁপিয়ে দিতে পারে। সেগুলো তো পাঠানো হয় না। পাঠায় কারা সেখানে তো কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। সেখানে সমিতির কিছু করণীয় থেকে যাচ্ছে। সেগুলো তাদের করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনে প্রতিটি সমিতির পাশে দাঁড়াতে হবে।
সম্প্রতি শিল্পী সমিতি থেকে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন রাখলে এই অভিনেতা বলেন, কি অপরাধে পরপর তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত জায়েদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে জানি না। তার ভুল থাকতে পারে কিন্তু তাকে শোকজ করা হয়েছে কিনা, নিয়ম অনুযায়ী সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে কিনা বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমার জানা মতে, কারো সদস্যপদ স্থগিত করতে হলে তিনবার শোকজ করতে হয়। তার উত্তর যদি সন্তোষজনক না হয়ে থাকে তাহলে সবাই মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এভাবে হয়েছে কিনা আমার ঠিক জানা নেই। সঠিকভাবে হয়ে থাকলে ঠিক আছে। আর যদি সঠিক নিয়মে না হয়ে থাকে তাহলে নির্বাচনের আগে তাকে বের করে দেওয়া ভালো হয়নি। তাদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল সেটা মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল সেটাকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে।
একসময় শিল্পীদের দাওয়াত দিতেন জায়েদ খান। সেই তিনিই দুই বছর ধরে সমিতির দাওয়াত পাচ্ছেন না। সম্প্রতি পিকনিকে দাওয়াত পাননি এই অভিনেতা।
এক প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা বলেন, এটা সাধারণ একটা অভদ্রতা। জায়েদের সদস্যপদ যদি নাও থাকে পূর্বে সমিতির জন্য কয়েক বছর কাজ করেছে সে জন্য হলেও ওকে দাওয়াত দেওয়া ছিল ভদ্রতা। জায়েদ তো বড় অন্যায়কারী কিংবা ক্রিমিনাল না যে, দাওয়াত দেওয়া যাবে না। শিল্পী না তারপরও অনেককেই তো দাওয়াত করা হয়েছে। নিজের সহকর্মীর প্রতি পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। সেখানে দাওয়াত না দেওয়া শোভনীয় মনে হয়নি। জায়েদকে আটকে দেওয়ার জন্যই সদস্যপদ স্থগিত করেছে। ওরাই বেশি কাজ করেছে। সবার নাম আসে না। জায়েদ খান সাধারণ সম্পাদক যার কারণে বার বার নাম আসে।
জায়েদ খানকে ঘিরে শিল্পী সমিতিতে কাদা ছোড়াছুড়ি চলমান। এ নিয়েও কথা বলেছেন এই অভিনেতা।
বললেন, আমার জানা মতে জায়েদের পক্ষ থেকে কোনও কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে না। জায়েদকে নিয়ে যদি কেউ কেউ বলে সেটা হয়ত বিশেষ কয়েকজন লোক বলতে পারে। যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের কাছে প্রচার যন্ত্র একটু বেশিই থাকে। তারা যদি ইচ্ছে করে অনেক কে লাগিয়ে দিয়ে বলতে পারে তাদেরকে ছোট করো। এটা তো আমাদের স্বভাব চরিত্রের মধ্যেই আছে।
যোগ করে বলেন, আগে কখনও এই পদটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। শেষ দুই বছর এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে কখনো জায়েদ বেশি কথা বলেনি। যখনই বলেছে সম্মান রেখেই বলেছে। আর নিপুণকে নিয়ে যেটা বলেছে আইনের কথা টেনে বলেছে। এটা বলতেই পারে। উভয়ের মধ্যে যে ভেদাভেদ রয়েছে সেটা থাকা ভালো না। আগামী নির্বাচনে সেটা দূর হবে বলে আশা করি। রাজনীতিতে যেমন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই এবার শিল্পী সমিতিতেও সেটাই চাই।
ইলিয়াস কাঞ্চন নেতৃত্বাধীন কমিটি দুই বছরে পিকনিক ছাড়া কিছু করেনি সে কথা উল্লেখ করে সোহেল রানা বলেন, শিল্পী সমিতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আসলে ইলিয়াস কাঞ্চন এই দুই বছরে কিছুই করতে পারেনি। কারণ, পুরো কমিটি নিয়ে একটা মিটিংই করতে পারেনি। এক দল কখনো মিটিংয়ে আসেনি। একা তো ওর পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। ওর জীবনের এই একটা পার্ট সেটা ভুলে যেতে চাইবে। এই সময়ে শিল্পী সমিতি একটা পিকনিক ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। আগে মিশা-জায়েদ যেভাবে কাজ করত এ কমিটি আসার পর সেরকম কিছুই দেখিনি আমি। নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকলে কখনোই ভালো কিছু করা সম্ভব না। ভালো কিছু করতে হলে সবাইকে এক হয়ে করতে হবে।
সে দিক থেকে মিশা-জায়েদ কমিটি অনেক ভালো ছিল। মানুষ জানত একটি কমিটি আছে বিপদে পাশে পাওয়া যায়। সবসময় ঈদে দু-তিনশো মানুষের বাসায় উপহার যেত, বললেন এই অভিনেতা।
অনেকে সমিতির এ কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। কি বলবেন? উত্তরে সোহেল রানা বলেন, তাহলে সমিতির কাজ কি? তাদের কাজ ডাকাতি-চুরি করা? সমিতির কাজই হচ্ছে শিল্পীদের সাহায্য করা। প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো। পাশে দাঁড়িয়েছে কিনা সেটাই বড় কথা।
বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার বাতিল করেছিল শিল্পী সমিতির সর্বশেষ সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের কমিটি। এ নিয়ে বেশ চর্চা হয়েছিল। ইলিয়াস কাঞ্চন কমিটিতে এসে তাদের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেন। তবে এই সদস্যপদ বাতিলের দায় জায়েদের কাঁধে আসে বরাবরই। যদিও দফায় দফায় উত্তর দিয়েছেন এই নায়ক। জানিয়েছেন তিনি এক নয়, পুরো কমিটির সিদ্ধান্তে সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছিল।
এবার এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সে সময়ের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সোহেল রানা। তিনি বলেন, সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছিল সবার সিদ্ধান্তেই। এখানে একা জায়েদের দোষ হবে কেন? এখানে দায়ী হলে পুরো কমিটি হবে। আমি, ইলিয়াস, আলমগীর, ফারুক, উজ্জ্বল ছিল। তাহলে তো আমরা পাঁচজনই দায়ী। আমরা ৪৬ জনের সদস্যপদ স্থগিত করেছিলাম। পরবর্তীতে ওরা আরো কিছু এড করেছিল। সেটা কমিটি করতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা যে ৪৬ জন বাতিল করেছিলাম তার মধ্যে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না কেন তাদের বাতিল করেছি। এটা নিয়ে নয়, শেষ নির্বাচন থেকে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। নিজেদের মধ্যে এটা থাকা ঠিক না। এবার চাচ্ছি সবাই মিলে কাজ করবে। আর যেন ভাগ না হয়। সবাই মিলে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করবে।