দেশের বাজারে নানা কারণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে নিত্যপণ্য দাম। এই ঊর্ধ্বমুখীর বাজারে আজকে একটি পণ্যের দাম বাড়লে কালকে আরেকটি পণ্যের দাম বাড়ে।এই উচ্চমূল্যের বাজারে সাধারণ মানুষের পুষ্টির অন্যতম মাধ্যম হলো ডিম, মাছ, মাংস। কিন্তু গত এক বছর ধরে এসব পণ্য এখন আর সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। খাবারের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে মাছের দাম। মাছের দাম বাড়লেও উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে ডিম ও মাংসের দাম। ফলে পরিবারের পুষ্টির যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সূত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, ধূপখোলামাঠ বাজার, শ্যামবাজার ও নয়াবাজার ঘুরে মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা এ তথ্য জানা গেছে।
মাছ বাজার ঘুরে জানা গেছে, বাজারে প্রতিটি মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৭০০ থেকে ২৩০০ টাকা, রুই মাছ প্রকারভেদে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ২৫০ থেকে ১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০ থেকে১২০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রায়সাহেব বাজারের মাছ বিক্রেতা বিজয় দাস বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। মাছের দামও বেশি। ঘাটে মাছ নেই বললে চলে। ফলে ঘাটে দাম অনেক বেশি। আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনে আনি এজন্য বেশি দামে বিক্রি করি। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশ মাছের দাম। বাজারে দুই রকমের ইলিশ পাওয়া যায়। একটা সাগরের ইলিশ ও একটা নদীর ইলিশ। দাম বেশি নদীর ইলিশের। কিন্তু অনেকেই সাগরের ইলিশকে নদীর বলে বিক্রি করছে। আসলে মাছের খাদ্যের দাম বাড়ছে ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আমাদের এখানে কিছু করার নেই। আগে যে ক্রেতা দুই কেজি মাছ নিতো দাম বাড়লে সেই ক্রেতা নিচ্ছে এক কেজি। এতে আমাদের লাভ কম হয়।
শ্যমবাজারে মাছ কিনতে আসা মো: শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, আজ বাজারে এসে দেখি মাছের দাম অনেক বেশি। আগে যেখানে ৩৫০-৪০০ টাকায় এক কেজি রুই মাছ কিনতে পারতাম, এখন তা কেজিতে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে ৪৫০-৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আগের মতো মাছ কিনতে পারছি না। এখনই বাজরের এই অবস্থা রোজার সময় কি জানি হয়। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের কোনো দিকে স্বস্তি নেই। আজকে মাছের দাম বাড়লে কালকে চালের দাম বাড়ে। এভাবে কতো দিন চৱকে হবে জানি না।
এদিকে মাছের দাম বাড়লেও স্থিতিশীল রয়েছে ডিম ও মাংসের দাম। পুষ্টির এই অন্যতম পণ্য দুইটির দাম স্থিতিশীল থাকলে যে দাম সেটা নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়, হালি ৪৮ টাকা৷ হাঁসের ডিমের ডজন ২১০ টাকা, আর হালি ৭০ টাক এবং দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২৫৫ টাকা, আর হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া রাজধানীর বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সূত্রাপুর বাজারে মুরগি বিক্রেতা মো: আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, মুরগি দাম এখন আর বাড়ে নাই। বিয়ের মৌসুম হলে চাহিদা বাড়ে তখন একটু দাম উঠা নামা করে। খামারে দাম বড়লে আমরাও দাম বাড়াই। আমাদের কিছু করার নেই। সরকারকে খামারিদের গিয়ে ধরতে বলেন।
ধূপখোলা মাঠ বাজারে গরু ও খাসির মাংস বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং বরকির মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ধূপখোলামাঠ বাজারে মাংস কিনতে আসা পার্থ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ভাই জিনিসের যে দাম মাংস খাওয়া ভুলে যেতে হবে। এখন বিশেষ দিন ছাড়া মাংস কেনা হয় না। বিশেষ দিন বলতে ছুটির দিন, বাসায় মেহমান এবং শবেবরাত, ঈদ ইত্যাদি। আগে সপ্তাহে তিন দিন মাংস খাওয়া হতো এখন মাসে একদিন মাংস খাচ্ছি। তারপরও সেটা কিনতে হলে দুইবার ভাবতে হচ্ছে। আমরা এখন মাছ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ তারপরও কেনো এতো দাম। শুধু কি গবাদি-পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে তাই; না কি অন্য কোনো কারণ রয়েছে? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।