কিশোর গ্যাং গ্রুপের মদদদাতা হিসেবে যারা কাজ করছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ।
তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা স্থানীয় বড় ভাইদের হয়ে কাজ করে।অনেকেই এসব গ্রুপের সদস্যদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যারা এসব গ্যাং গ্রুপের মদদদাতা রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলমান রয়েছে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কিশোর গ্যাং গ্রুপ প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার মহাখালী, বনানী, বিমানবন্দর, টঙ্গি ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক অভিযান চালিয়ে ৬টি কিশোর গ্যাং গ্রুপের দলনেতাসহ ৩৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ‘০০৭’ গ্রুপের দলনেতা আল-আমিন (২৪), ‘জাউরা’ গ্রুপের দলনেতা মাহাবুব (১৯), ‘বাবা’ গ্রুপের দলনেতা সাদ (২২), ‘ভোল্টেজ’ গ্রুপের- মনা (২৮), ‘ডি কোম্পানি’ গ্রুপের- (লন্ডন পাপ্পু চালায়) মো. আকাশ (৩০) ও মো. আমির হোসেন (৩৬), ‘জাহাঙ্গীর’ গ্রুপ ওরফে বয়রা জাহাঙ্গীর গ্রুপের দলনেতা। এসব গ্রুপের গ্রেপ্তার বাকি সদস্যরা হলেন- রাসেল (১৭), আরাফাত (১৭), রবিন (১৫), ইসলাম (২৯), জুয়েল (২২), রবিউল (১৬), মুরাদ (১৭), রোহান (২২), হৃদয় (২০), ওবায়েদ (১৮), মো. জিসান (১৯), মো. ঈমন (২০), মো. রমজান (২১), মো. সজিব (১৮), মো. শাকিব (২২), মো. রাজিব (১৯), শাহজাহান সাজু ওরফে রাসেল (৪৫), মো. জিলাদ মিয়া (২০), মো. হৃদয় (১৯), আ. রায়হান (১৫), মো. বাবু মিয়া (২২), মো. শাহজাহান (২১), মো. জালাল মিয়া (২৮), লামিম মিয়া (১৫), মো. রাকিব (১৬), মো. হিরা মিয়া (১৭), ইমরুল হাসান (১৭), মো. সাকিন সরকার রাব্বি (১৮), মো. সুজন মিয়া (১৯), খাইরুল (১৯) ও রাহাত (১৯)।
অভিযানে আসামিদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম গাজা, ২৪ টি মোবাইল, ১টি ব্লেড, ১টি কুড়াল, ১টি পাওয়ার ব্যাংক, ৫টি রড, ১৬টি চাকু, ৩টি লোহার চেইন, ১টি হাতুড়ি, ১টি মোটরসাইকেল এবং নগদ ২৪ হাজার ২৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং, গ্যাং কালচার, উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনা। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দলবেঁধে ঘুরে, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মারামারি করে।
এছাড়াও তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে তাদের বিশৃঙ্খলায় কেউ প্রতিবাদ করলেও খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর মহাখালী, বনানী, বিমানবন্দর, টঙ্গি ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক অভিযানে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘০০৭ গ্রুপের দলনেতা আল-আমিন, জাউরা গ্রুপের দলনেতা মাহাবুব, বাবা গ্রুপের দলনেতা সাদ, হাই ভোল্টেজ গ্রুপের মনা, ডি কোম্পানির দলনেতা পাপ্পু ওরফে লন্ডন পাপ্পু ও তার অন্যতম দুই সহযোগী আকাশ ও আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর গ্রুপের দলনেতা বয়রা জাহাঙ্গীরসহ ৩৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্রতিটি গ্রপের আনুমানিক সদস্য ১০ থেকে ১৫ জন। তারা টাকার বিনিময়ে মারামারি, দখলবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে আরও জানায়, তাদের মধ্যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র, ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
কিশোর গ্যাং গ্রুপের মদদদাতা কারা, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, আপনারা জানেন কিশোর গ্যাং গ্রুপের দলনেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব গ্যাং সদস্যদের কিছু ব্যক্তি ব্যবহার করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
তিনি আরও বলেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা মদদদাতাদের হয়ে মারামারি করে। অনেকেই এ গ্রুপের সদস্যদের মূলত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের হয়ে কাজ করার কারণে অপরাধ করে শেল্টার পায়। যারা তাদের নানাভাবে মদদদাতা হিসেবে কাজ করছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, গণমাধ্যম ও র্যাব সদরদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কিশোর গ্যাং সম্পর্কে আমরা অনুসন্ধান করছি। আগেও এভাবে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাব-১ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আগে অনেকের নাম পেয়েছি। তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এখন কিশোর গ্যাং নিয়ে নির্দেশনা পাওয়ার পরে গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে কাজ করেছি। এ সময়ে নতুন গ্রুপগুলোকে দলনেতাসহ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কার্যক্রম, মামলাসহ তাদের বিষয় অনুসন্ধান চলছে। আমাদের অভিযান থেমে নেই। নতুন করে কোনো গ্রুপের তথ্য পেলে গ্রেপ্তার করা হবে।
কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে দেখা যায়। এসব মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই অপরাধীদের কোনো দল বা ঠিকানা থাকতে পারে না। তাদের কোনো পরিচয় বিষয় না। তারা কার হয়ে কাজ করে সেটিও বিবেচ্য বিষয় নয়। কোনো অপরাধ করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।