জাতিসংঘ সদর দপ্তরে টানা অষ্টমবারের মতো যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এ তথ্য জানায়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ, অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বলিভিয়া রোমানিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্থায়ী মিশনসমূহ, জাতিসংঘ সদর দপ্তর ও ইউনেস্কোর সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস। এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বহু ভাষার ব্যবহারে সমৃদ্ধ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার পর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি, বাহরাইন, বলিভিয়া, রোমানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রিয়া, ভারত, হাঙ্গেরি, পাপুয়া নিউগিনি ও তানজানিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি বা দূতদের সঙ্গে জাতিসংঘ ও ইউনেস্কোর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের একজন প্রতিনিধি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২০২৪ এর মূল প্রতিপাদ্য- বহু ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা; প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞান চর্চার স্তম্ভ- বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষার পাশাপাশি বাংলা, হিন্দি ও রোমানিয়ান ভাষায় বক্তব্য ভাষান্তর করা হয়।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় উদ্বোধনী সংগীত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি”, জাতিসংঘ চেম্বার মিউজিক সোসাইটির পরিবেশন করা যন্ত্রসংগীত এবং অভিবাসীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীদের গান অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনুষ্ঠানটি জাতিসংঘের ওয়েব টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষাশহীদদের সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের পথিকৃত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম, যার চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মাধ্যমে।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশির উদ্যোগকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পূর্ণ স্বীকৃতি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত।
তিনি শিশুদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মাতৃভাষাভিত্তিক পাঠদানের গুরুত্ব তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত মুহিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবটি পুনর্ব্যক্ত করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও অন্যান্য বক্তারা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। মাতৃভাষার জন্য বিশেষ একটি দিন নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
মাতৃভাষাভিত্তিক বহু ভাষায় শিক্ষাদানকে জ্ঞানার্জন ও মেধা বিকাশের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে তারা এর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে ভাষা ও ভাষাবিষয়ক এনজিও কমিটির সভাপতি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, জাতিসংঘ সচিবালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা আয়োজনে অংশ নেন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন অনুষ্ঠানের আগে সকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধির নেতৃত্বে মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিশনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বাণী পাঠ করা হয়। এ ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্য এবং মহান একুশের ভাষাশহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত হয়।