গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় দ্রুত সুনির্দ্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
তারা বলেছেন, দেশে ৪০ শতাংশ শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের প্রতিনিয়ত মারধরসহ নানা ধরনের নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। সুনির্দ্দিষ্ট আইন ওই সব শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্মেলন কক্ষে ‘গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় সুনির্দ্দিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন তারা।
জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা এবং উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), শাপলা নীড় ও এডুকো-বাংলাদেশ আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
এএসডি’র কর্মসূচি পরিচালক মো. হামিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তৃতা করেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মো. সেলিম রেজা ও পরিচালক কাজী আরফান আশিক, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব খোন্দকার মো. নাজমূল হুদা শামিম, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি মো. মাহবুবুল হক, সিনিয়র সাংবাদিক কাজী রফিক, এডুকোর ম্যানেজার আফজাল কবির খান, লেবার ফাউণ্ডেশনের মিতু খাতুন ও এএসডি’র ফিরোজা আক্তার শম্পা।
মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক মো. রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ সরফুদ্দিন খান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুশ্রম বিশ্বের কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই শিশুশ্রম বন্ধ করে শিশুদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমরা সভ্য সমাজের বাসিন্দা কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে।
তিনি আরও বলেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহকর্মে নিয়োজিত অনেক শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আবার কারো আশ্রয় হয়েছে যৌন পল্লীতে। এমনকি অনেকে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাই সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে সব ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করছে। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সব প্রকার শিশুশ্রম বন্ধে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সিনিয়র সহকারি সচিব খোন্দকার মো. নাজমূল হুদা শামিম বলেন, সারাদেশে শিশুশ্রম বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে শ্রম মন্ত্রণালয়। আমাদের টার্গেট ২০২৫ সালের মধ্যে শিশু শ্রম মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এরই মধ্যে আমরা চারটি প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারকরা শিশু শ্রম নিরসন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিলে শ্রম মন্ত্রণালয় সার্পোট দেবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
সংলাপে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সরকার এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসমূহ শিশু গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে বিগত দুই দশক ধরে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও সংশোধন এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন। তা সত্ত্বেও শিশু গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি এখনো একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছে। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং নীতিমালাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, দেশের বিদ্যমান কোন আইনই শিশু গৃহকর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। ফলে, ব্যাপক সংখ্যক শিশু গৃহকর্মী আইনি সুরক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। তাই নতুন আইন প্রণয়ন জরুরি। এরই মধ্যে গৃহকর্মী সুরক্ষা আইনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রবন্ধে।