দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগকে ভিন্ন তিনটি দেশের সমন্বয়ে তৈরি সরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের সরকার নয়।তারা ভারত, চীন, রাশিয়ার তৈরি সরকার। চীন, রাশিয়ায় তো গণতন্ত্রের বালাই নেই। আর ভারতে এখন যা চলছে, সেই আগের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য নেই।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী পেশাজীবী ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ডামি সংসদ বাতিল এবং এক দফা দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
গয়েশ্বর বলেন, সরকার নাকি সংসদে বসবে। ভালো কথা বসেন। আপনাদের কাজ আপনারা করেন। আমাদেরটা আমাদের করতে দেন। আজকে কোথাও আমাদের কালো পতাকা মিছিল করতে দেননি। দেশের মানুষ কিন্তু ভালোর ভালো, খারাপের খারাপ। সুতরাং, মানুষের প্রতিবাদের ভাষা বোঝেন। পুলিশের লাঠি দিয়ে জনগণকে বেশি দিন দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা শান্তি প্রিয় মায়ের শান্ত ছেলে কভু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি। ৭১ সালে তার প্রমাণ।
বিএনপির এ নেতা বলেন, দেশের জনগণ তো এই সরকারের বিরুদ্ধে লাল ও কালো পতাকা প্রদর্শন করছে। তারা কিন্তু এই সরকারের পক্ষে কিছু বলছে না। সুতরাং লাজ-লজ্জা-ভয়, যাদের এই তিন নয়- তারাই সংসদে বসতে পারে।
মানববন্ধনে গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, এই সরকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য যারা প্রজাতন্ত্রের বেতন নেয় আর সচিবালয়ে যারা বসেন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা এরা একটি সম্মিলিত সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ১৮ কোটি মানুষের অধিকার হরণে এবং তাদের নাগরিক অধিকার বলতে যা আছে, সব অধিকার খর্ব করে একক কর্তৃত্ববাদ চায়। এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের চরিত্র কখনও গণমুখী হয় না। কর্তৃত্ববাদীরা কখনও মানুষের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বুঝতে রাজি না। কারণ, কর্তৃত্ববাদীরা কখনোই জনগণ কর্তৃক সমর্থিত হয় না। সে কারণে জনগণের প্রতি তাদের কোনো মায়া, মমতা অথবা সাংবিধানিক দায়িত্ববোধ কখনো জন্মায় না। এদের কর্তৃতবাদ মনেই হলো দেশের অর্থ সম্পদ লুটপাট।
আজকে সরকার এমনভাবে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতিবাজ বানিয়েছে, এখন তারা দুর্নীতি না করলে চাকরি যায় অথবা দুর্নীতিতে সহায়তা না করলে চাকরি যায়। সুতরাং, সংসদ সদস্য আর দুর্নীতিবাজরা যখন একাকার হয়ে যায়, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান চিত্র এটাই হওয়া স্বাভাবিক। বাংলাদেশের কোষাগার কেন শূন্য? ব্যাংকগুলোয় কেন টাকা নেই? উন্নয়নের মধ্যে এত স্বাদ কেন? উন্নয়নের অপর নাম দুর্নীতি-লুটপাট।
আজকে দেশে দ্রব্যমূল্যের কি অবস্থা? জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকারের চায় কেবলমাত্র ক্ষমতা। টাকা পাচার বেড়েছে। তাহলে এসবের জবাব দেবে কে? প্রশ্ন রাখেন গয়েশ্বর।
বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করছে ও করে যাবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা রেকর্ড করতে পারিনি, এক সরকারের মেয়াদে ১৭৩ দিন হরতাল দেওয়ার। আমরা রেকর্ড করতে পারিনি, গান পাউডার দিয়ে শেরাটনের সামনে বাসে মানুষ মারার। আমরা এখনও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারিনি চলমান পথিককে বিবস্ত্র করার। আমরা এখনও পারিনি লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মেরে লাশের ওপর উঠে নাচ-গান করার। এসবের সংস্কৃতি কাদের মনে… যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি কাদের মনে… যারা জোর করে ক্ষমতায় থাকে।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আসনে দুটি না তিনটি কেন্দ্রে ১০০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। তার মানে টুঙ্গিপাড়ায় মানুষ মরে না, অথবা গত পাঁচ বছরে কেউ মারা যায়নি, বিদেশে যায়নি, অসুস্থ হয়নি। আপনারা (সরকার) কিন্তু আপনাদের ফাঁদে পড়েছেন, আপনাদের কথার ফাঁদে পড়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দেশের ৭ শতাংশ লোক সরকারকে নাকি ভোট দিয়েছে। তাহলে দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে। তাদের চান না। তাছাড়া ওই ৭ শতাংশ লোক হলো সরকারের সুবিধা ভোগী। যাদেরকে কার্ড দিয়ে আবার তার জব্দ রেখেছে। এটা তো সমকামী নির্বাচন। শেখ হাসিনা ৭ পার্সেন্ট লোকের প্রধানমন্ত্রী আর তারেক রহমান ৯৩ শতাংশ মানুষের নেতা এটা প্রমাণিত।
মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টাকার ও ক্ষমতার লোভে তাদের জামিন দেয়নি। তারা নাকি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। তাহলে একই ঘটনার মামলায় মেজর শাহজাহান ওমর জামিন পেয়ে নৌকার এমপি হলেন কীভাবে? তাহলে তো বোঝা যায়, এটা সাজানো ও পরিকল্পিত ঘটনা। এখানেই বোঝা যায় এই সরকার জনগণের সরকার নয়। এরা ভারত, চীন ও রাশিয়ার সরকার। চীন ও রাশিয়ায় তো নির্বাচন হয় না।
বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্ব ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল কুদ্দুস, প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (অ্যাব) সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা, কৃষিবিদ শফিকুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের সভাপতি মাহতাব, ন্যাবের সভাপতি বেগম জাহানারা সিদ্দিকী, ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ডা. ওবায়দুল কবির খান, ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম প্রমুখ।