কৃষকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার দুটোই কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথামার্ধ শেষে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭৭০ কোটি ১০ লাখ টাকা।যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের বছরে একই সময়ে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮১৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের কমপক্ষে ২ শতাংশ কৃষি ঋণ হিসেবে বিতরণ করার বাধ্যবাধকতা আছে। সে সঙ্গে বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পুরো ঋণই কৃষি খাতে বিতরণ করছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর মোট ৩৫ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৫২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে। টাকার হিসাবে যা ১৮ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা।
খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে কৃষকের কাছে অর্থ সররবারহকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। একই সঙ্গে পল্লী অঞ্চলে কর্মসংস্থানও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে। ফসল ফলানোর পথে অর্থ যাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে। সঙ্গে সুদ হারও অন্য যে কোনো ঋণের চেয়ে কিছুটা নমনীয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কৃষি ঋণ বিতরণে নির্দেশনার পাশাপাশি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। কোন ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিতরণ না করলে অনর্জিত ঋণের একটি পরিমাণ জরিমানা দেয়। যা বাংলাদেশ ব্যাংকে ওই ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নিয়ে তহবিল গঠন করে কৃষি খাতে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে প্রতি বছরই মোট ঋণ বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কৃষি ঋণ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে কৃষি ঋণ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা কিছু উপরে। ১৩ বছরে বেড়ে তা প্রায় চারগুণ হয়েছে। যা খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।
কৃষি ঋণ বিতরণে বাদ যায়নি দেশে ব্যবসারত দেশি-বিদেশি কোনো ব্যাংকই। যেসব ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে পর্যাপ্ত শাখা নেই তারা এমআরএ থেকে নিবন্ধিত ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণি সংস্থা-এনজিও এর মাধ্যমে বিতরণ করছে। বছরের যে কোনো সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে থেকে নিয়ে বিতরণ করছে। আবার নির্দিষ্ট সময়ে শেষে আবার ফেরতও দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসেই বিদেশি ব্যাংক আল ফালাহ, হাবিব ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক ইন্ডিয়া, দেশি আল আরাফা ও ঢাকা ব্যাংক পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলেছে। লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশর বেশি ঋণ বিতরণ করেছে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক।
কৃষি ঋণে সুদ হার যেমন কম। আবার অপরেটিং খরচও কিছুটা বেশি পড়ে। তবে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের কাছে তথা পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবারহের লক্ষ্য হিসেবে একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ইতিবাচক বিবেচনা করা হয়। অধিকাংশ ব্যাংকই সেভাবে বিতরণ করে। তথ্য বলছে বছরের প্রথমার্ধে কিছু ব্যাংক বিতরণই শুরুই করেনি। কৃষি ঋণ বিতরণ বিতরণ শুরু না করা ব্যাংকগুলো হলো- উরি ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক। আবার ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশের নিচে কৃষিঋণ বিতরণ করা ব্যাংকগুলো হলো- মধুমতি ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক।
ঢাকায় সর্বোচ্চ পরিমাণ কৃষিঋণ বিতরণ করা কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক।