রাজস্ব আদায়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেওয়া এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচার রোধ করা কাস্টমের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে কাস্টমের সক্ষমতা বাড়ানো খুবই জরুরি। কাস্টমকে এই দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
মাহমুদ আলী বলেন, কাস্টম একদিকে রাজস্ব জোগান দিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশে ব্যবসাবান্ধব ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বাণিজ্য সহজীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। বাণিজ্য সহজীকরণ ছাড়া ব্যবসার সময় ও খরচ কমানো সম্ভব নয়। এজন্য পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের দিকে নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, আধুনিক বুদ্ধিমত্তা ও ব্লকচেইন ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। এসব প্রযুক্তি ব্যহারের মাধ্যমে কাস্টমকে স্মার্ট কাস্টমে পরিণত হতে হবে। রাজস্ব আদায় ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার উল্লেখ করেন, বাণিজ্য সহজীকরণে (ট্রেড ফেসিলিটেশন) আইন তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তা বাস্তবায়ন করা হয়নি; এগুলো সত্যিকারার্থে বাস্তবায়নের তাগিদ দেন তিনি।
অর্থসচিব বলেন, বাণিজ্য সহজীকরণে শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভাবমূর্তিই উজ্জ্বল হবে না; ২০২৬ সালে বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশে থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে—আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যেসব সুবিধা পাচ্ছি তা আস্তে আস্তে বন্ধ যাবে যাবে; নগদ সুবিধা প্রত্যাহার করা হবে—বাণিজ্য সহজীকরণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
তিনি ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে বলেন, কাস্টমকে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। কাস্টম অটোমেশন হলে অন্য সমস্যাও দূর হবে।
বাণিজ্য সহজীকরণের ক্ষেত্রে নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ারসহ বিভিন্ন রকমের সনদের যেসব কাজ তা শিল্প মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছে। সেগুলো সমন্বিতভাবে করতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলো দ্রুত করার তাগিদ দেন অর্থ সচিব।
ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প প্রতিষ্ঠান ইনসেপটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের অংশ হিসেবে অথোরাইজ ইকোনমিক অপারেটর (এইও) ব্যবস্থার আওতায় পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে দ্রুততম কাস্টম সেবা প্রদানে এনবিআর আইন তৈরি করে দিলেও তা প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন হয়নি। এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, রপ্তানির সময় যেসব পণ্য খোলা হলে নষ্ট হয়ে যাবে সেগুলোও পরিদর্শনের নামে কাস্টম খুলে থাকে। এর ফলে এসব কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। কাস্টমকে আরও আধুনিক হতে হবে, যাতে মোড়কের বাইরে থেকে উন্নত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সেগুলো চেক করতে পারে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার ও রাজস্ব বোর্ডের সদস্য হোসেন আলী।
এবারের আন্তর্জাতিক কাস্টম দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মিলে নবীন-পুরনো অংশীজন, কাস্টমস করবে লক্ষ্য অর্জন’। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের সদস্য মাসুদ সাদিক। প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখেন এনবিআরের আরেক সদস্য জাকিয়া সুলতানা।