নির্বাচনে হেরে জামানত হারানোয় দুদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাভাবে ট্রলের শিকার হচ্ছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা মাহিয়া মাহি।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে ভোট করে অনেকটাই চুপ ছিলেন মাহি।ভোটে হারলেও শোডাউন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের পর অনেকটা আড়ালেই চলে গিয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকদেরও ফোন রিসিভ করছিলেন না। তবে দুদিন পর ভোট নিয়ে মুখ খুলেছেন মাহি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে ‘গোদাগাড়ী-তানোরবাসী উদ্দেশে’ শিরোনামে একটি লাইভ করেছেন তিনি। সেখানে বলেছেন, ‘হেরে গেলেও আমি ভেঙে পড়িনি। কম ভোট পেলেও আমি মেয়ে হয়ে ভোট করেছি তা অ্যাপ্রিশিয়েট করা উচিত। ’
নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে মাহি বলেন, ‘প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। ’
সোমবার রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে ফেসবুক থেকে লাইভে এসব কথা বললেন মাহিয়া মাহি। তিনি বলেন, সবাই নিশ্চয় ভাবছেন আমার প্রচণ্ড মন খারাপ। কিছুটা তো মন খারাপ হবেই। কারণ, আমি হেরে গেছি গেইমে। নির্বাচন একটা গেম। মন খারাপ কিছুটা, কিন্তু সেরকম লেভেলের কিছু না। প্রতিটি সিচুয়েশনেই আগে নেগেটিভ বিষয়টি মাথায় রাখি, নেগেটিভ হতেই পারে। প্রতিটি সিচুয়েশনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। ইশতেহারে বলেছিলাম- নারীদের ঘর হবে একেকটা কর্মসংস্থান ও তরুণরা হবেন উদ্যোক্তা। এসব ঠিক কতটা বড় পরিসরে করতে পারবো, সেটা সরকারিভাবে যতটা সম্ভব তা ব্যক্তিগতভাবে একটু চ্যালেঞ্জিং। এরপরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে যথেষ্ট চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, রাজশাহীর তানোর-গোদাগাড়ী উপজেলার রাস্তা-ঘাটের যে বেহাল অবস্থা, সারা দেশের রাস্তা যে উন্নত সেখানে তার নানা বাড়ি তানোরে এখনও গরুর গাড়ি চলার মতো অবস্থা। বৃষ্টি ও বর্ষার সময় হাঁটু কাঁদা হয়ে যায়। সেই রাস্তাঘাট এবং বরেন্দ্রভূমির যে পানির সমস্যা। তাই এই দুটো বিষয়েই দৃষ্টি দেবেন। যিনি নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছেন, গত ১৫ বছরে যেসব উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি, সেসব এই পাঁচ বছরে যেন তিনি করেন সেই পরামর্শও দেন মাহি।
আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী ও নির্বাচিত প্রার্থীর সমালোচনা করে অভিনেত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে তার যে জনপ্রিয়তা কমে এসেছিল, তা যেন এই পাঁচ বছরে কাটিয়ে ওঠেন। আমি কিন্তু মাঠে আছি। তা না হলে আগামী পাঁচ বছর পর ফের নির্বাচনী মাঠে দেখা হবে। আর তার তো (বর্তমান সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরী) জনপ্রিয়তা শূন্য। যতটা ভোট পেয়েছেন, সেটা নৌকার জন্যই। তো আপনাদের এত খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই।
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি বলেন, আমার জন্য মাঠে যারা কাজ করেছে, আগামী পাঁচ বছরে আমার জন্য যারা কাজ করবে সেসব কর্মী-সমর্থকদের আপনারা (ক্ষমতাবান) যদি কোনোরকম ডিস্টার্ব করেন, তাহলে মনে রাখবেন, আমি কিন্তু দুর্বল না। আমি মানসিকভাবে যতটা শক্তিশালী, কর্মীদের ন্যূনতম অপমানেও আমি সর্বোচ্চ লড়াই করব। যে কর্মীরা আমার জন্য কাজ করেছে, তাদের জন্য দরকার হলে আমি জানও দিতে পারি।
পাঁচ বছরে আপনারা (নির্বাচিত প্রার্থী) এমন এমন কাজ করবেন, যাতে মানুষের হৃদয়ে আপনাদের জায়গা হয়। যিনি নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন, তার প্রতি আমার পরামর্শ- আপনারা মানুষের উপকারের জন্য যে সুপ্রিম পাওয়ার পেয়েছেন পাঁচ বছরের জন্য, সেটা কাজে লাগাবেন।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী এক লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থবারের মত বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রাব্বানী। কাঁচি প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪১৯ ভোট। আর নায়িকা মাহি পেয়েছেন মাত্র ৯ হাজার ৯ ভোট। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিজ আসনের ১৭ কেন্দ্রে কোনো ভোটই পাননি মাহিয়া মাহি। আর রাজধানী উত্তরার ভোটার হওয়ায় তিনি নিজেকে নিজের ভোটটিও দিতে পারেননি। ফলে নির্বাচন কমিশনের শর্ত মোতাবেক মোট কাস্টিং ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় জামানত হারান ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত রূপালি পর্দার এ তারকা অভিনেত্রী।