রাজশাহীতে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়ে বিএনপির এক নেতা ভোট চেয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাকেসহ বিএনপির চারজন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
আর বহিষ্কারের কারণ হিসেবে সরাসরি দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়।
বহিষ্কৃত চার নেতা হলেন – রাজশাহীর তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক খান, গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম, উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল হান্নান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক। কে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
তবে ভোট চাওয়া ওই নেতা বাদে বাকি তিনজন নির্বাচন বর্জনের দাবিতে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি মাঠ পর্যায়ে নিয়মিতভাবে কাজ করছেন বলে দাবি করেছে জেলা বিএনপি। তাই এই তিনজনকে বহিষ্কার করায় স্থানীয় নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বহিষ্কার প্রশ্নে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, কোনো ওয়ার্ড কমিটির নেতাকে বহিষ্কার করতে হলে ইউনিয়ন কমিটি সেটা সুপারিশ করে। ইউনিয়ন কমিটির কোনো নেতাকে বহিষ্কার করতে হলে উপজেলা কমিটির সুপারিশ লাগে। তবে গোদাগাড়ীর তিন নেতাকে বহিষ্কারের ক্ষেত্রে কোনোটিই মানা হয়নি। তারা এই বহিষ্কারের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।
রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার জানান, বিএনপির চার নেতাকে বহিষ্কার করার ঘটনায় তারা বিব্রত। সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক খান নৌকার প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা ঠিকই আছে। তবে বাকি তিনজন নেতা বিএনপির সকল দলীয় কার্যক্রমে নিয়মিতভাবে অংশ নিচ্ছেন। তারা কয়েকদিন থেকে বিএনপির চলমান কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে লিফলেট বিতরণ করছেন।
তিনি আরও বলেন, বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি। তাই তারা হোয়াটসঅ্যাপে রাজশাহী জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদলিপি লন্ডনে পাঠাবেন। আশা করছেন- সেখান থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সংশোধন করা হবে৷
তা না হলে গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির অনেক নেতাই পদত্যাগ করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়ে তানোর উপজেলার সরনজাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক নৌকার ভোট চান।
ওই জনসভায় তিনি বলেন, ‘যারা বিএনপির কর্মী-সর্মথক আছেন, তাদের কাছে আমার মেসেজ (বার্তা) হচ্ছে, আমরা ভোটকেন্দ্রে যাব, ভোট দেব। আমাদের তানোরের গর্ব, তানোরের অহংকার ওমর ফারুক চৌধুরী। তার প্রতীকেই কিন্তু আমরা ভোট দেব। ’
বিএনপির নেতার এমন বক্তব্যে তখন থেকেই রাজশাহীজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এছাড়া গত ১৯ অক্টোবর রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনার চত্বরে তিনি আরেক ঘটনা ঘটান। ওই দিন অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি উপস্থিত হন। এ সময় এই আসনের বর্তমান এমপি ও নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী একটি ফুলের মালা নিয়ে মোজাম্মেল হকের গলায় পরিয়ে দেন। ওই সময় গুজব ওঠে তিনি দলে যোগ দিচ্ছেন।
যদিও তখন বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হক খান বলেন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে খুবই স্নেহ করেন। সেজন্যই মালাটা পরিয়ে দিয়েছেন। এটা রাজনৈতিক কোনো ব্যাপার নয়। আর ওমর ফারুক চৌধুরীও তখন বলেছিলেন, এটা রাজনৈতিক মালা নয়।