সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। আন্দোলনকারী দলগুলোর দাবি না মেনে ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন।এদিকে নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে আন্দোলন জোরালো করতে আরো কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা করেছে দলটি। তবে চলমান দাবি আদায়ের আন্দোলনে হরতাল-অবরোধে সাড়া না মিললেও অসহযোগ কর্মসূচি কতোটা সফলতা পাবে তা নিয়ে প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ৩০ নভেম্বর ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ৩০টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আর বিএনপি, সিপিবি, বাসদসহ ১৪টি দল ভোটে যায়নি। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নির্বাচন করছে। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি নিবন্ধিত দলের সবগুলোই অংশ নিয়েছিল। আর বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল বর্জন করলেও দশম সংসদ নির্বাচনে ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, টানা আন্দোলনের পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জন করে এবার ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপির কেন্দ্র আর তৃণমূল পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। দলটির কেন্দ্র আশাবাদী হলেও পুলিশি তৎপরতা আর দলের নেতারা মাঠে না থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অসহযোগের ডাক দিয়ে সরকারকে ‘অসহযোগিতা’ করার আহ্বান জানানোর পর দলটির নেতাকর্মীরা এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে, বিএনপি নেতাদের দাবি-তারা মাঠে ছিলেন। হয়তো কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিলেও পরবর্তীতে তারা মাঠে নেমেছেন।
এদিকে, অসহযোগ আন্দোলন বাস্তবায়নে জনসম্পৃক্তা আনতে চার দিনের আজ দ্বিতীয় দিন চলছে। এর আগে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ এবং চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষে পুলিশ কনস্টেবল নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রথমইে গ্রেপ্তার হন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর প্রথম সারির কয়েকজন নেতাসহ ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দাবি বিএনপির। দলটি দুই একদিন বিরতি দিয়ে ৫৩ দিন হরতাল-অবরোধে থাকলেও পালিত হয়েছে ঢিলেঢালাভাবে। ব্যাপক পুলিশি তৎপরতায় দল বা অঙ্গসংগঠনের বেশিরভাগ নেতা তাদের কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কর্মসূচি বেশিরভাগ স্থানে পালিত হয়নি বললেও চলে। বিশেষ করে রাজধানীতে কর্মসূচি পালনে ঝটিকা মিছিল ছিল বিএনপির যেন ভরসা। অবশ্য দলটির সমমনা কয়েকটি ছোট দল বো জোট প্রেসক্লাব-পল্টন এলাকায় নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে আসছে।
চলমান পরিস্থিতির মাঝেই গত বুধবার দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের পক্ষ থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীকে ৭ জানুয়ারির ‘ডামি’ নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ভোটগ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বিরত থাকারও অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারকে সব প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল এবং ব্যাংকগুলো সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম হওয়ায় ব্যাংকে লেনদেন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় অভিযুক্তরা মামলায় হাজিরা দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বাংলা নিউজকে বলেন, একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের দাবিতে আমরা দীর্ঘ দিন থেকে আন্দোলন করে আসছি। দাবি আদায়ে ইতিমধ্যে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া কয়েছে। আর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক ১২ দলের সমন্বয়ক রাশেদ প্রধান বাংলা নিউজকে বলেন, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে আসছি। আন্দোলনকে আরো জোরদার করতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৩
টিএ/এমএম