সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এর আগে গতকাল (১৩ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে সই করেছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হাবিবুল হাসান।
নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশ অব্যাহত থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ছাড়া নির্বাচনী কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত হতে পারেন এরূপ কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠায় নির্বাচন কমিশন। এতে নির্বাচন উপলক্ষে প্রচারণা ছাড়া সব প্রকার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একইসঙ্গে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
এরই মধ্যে হেফাজতে ইসলাম ২৯ ডিসেম্বর সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
এতে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত নির্বাচনী কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোটদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে এরূপ কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যাবে না।
চিঠিতে ইসি জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ধার্য করা রয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু করবে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত নির্বাচনী কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোটদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে এরূপ কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখা বাঞ্ছনীয়।
এ অবস্থায়, আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হলো।
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ২৯টি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচন দাবিতে লাগাতার অবরোধ ও হরতালসহ নানান কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়, সেজন্য নির্বাচন বিরোধী রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন।
কেননা কমিশন মনে করে নির্বাচন বিরোধী রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে ভোটারদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হতে পারে। এতে ভোটার উপস্থিতিও কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বিএনপির ডাকা মানববন্ধন কর্মসূচি ঘিরে বিভিন্ন জেলায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির তথ্য পেয়ে আসছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া রোববার অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এসব সভা-সমাবেশ হোক নির্বাচন কমিশন তা চায় না।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচির বিষয়ে ইসির শক্ত অবস্থানের বিষয়টি শনিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের বক্তব্যেও উঠে আসে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। এখন এটি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব। তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যে কোনো কার্যক্রম নির্বাচন পরিপন্থী হিসেবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে প্রচলিত বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সাত জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ছিল ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত, মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে বলে জানায় ইসি।