ছয় মাসের মেয়ে রৌজামনির কাছে আর ফিরবেন না জেসমিন
বিয়ের মাত্র দেড় বছর হয়েছে জেসমিন আক্তার আর হাসান মিয়ার। ঘরে আছে ছয় মাসের মেয়ে রৌজামনি। হাসান ইজিবাইক চালিয়ে যা আয় করেন, তাতে সংসার ভালোভাবে চলে না। এ জন্য মাসখানেক আগে পোশাক কারখানায় কাজ নেন জেসমিন। প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার সকালেও মেয়েকে রেখে কাজে যান তিনি। কিন্তু জেসমিনের আর মেয়ের কাছে ফেরা হবে না। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট এলাকায় বাসচাপায় তিনি মারা গেছেন।
ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের চেলেরঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনায় জেসমিনসহ ছয়জন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের লাশ রাখা হয়েছিল ত্রিশাল থানায়। বেলা ১১টায় ত্রিশাল থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানা চত্বরে উপচে পড়া ভিড়। তাঁদের স্বজনেরা পৃথক পৃথক স্থানে জড়ো হয়ে আহাজারি করছেন।
থানার সামনে একটি ভ্যানের মধ্যে বসে আহাজারি করছেন জেসমিন আক্তারের স্বামী হাসান মিয়া। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হাসান মিয়া একবার অচেতন হয়ে ভ্যানের ওপর পড়ে যান। তখন স্বজনেরা হাসানের মাথায় পানি ঢালেন।
স্বজনেরা বলেন, জেসমিনের বাবার বাড়ি ত্রিশাল উপজেলার তেঁতুলিয়াপাড়া গ্রামে। ছোটবেলায় বজ্রপাতে মারা যান জেসমিনের মা। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে মারা যান বাবাও। এর পর থেকে কাজ শুরু করেন জেসমিন। দেড় বছর আগে বিয়ে হয় হদ্দেরভিটা গ্রামের হাসানের সঙ্গে। বিয়ের পর পোশাক কারখানার কাজ ছেড়ে দেন স্বামীর কথায়। সংসারে সচ্ছলতার জন্য এক মাস আগে আবারও কাজ নেন ভালুকার একটি পোশাক কারখানায়। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কাজে যেতেন জেসমিন।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মারুয়াখালী গ্রামের আলতাফ হোসেনও মারা গেছেন। তাঁর বোন রাহিমা খাতুনের আহাজারিতে আশপাশের মানুষের চোখে পানি চলে আসছিল। রাহিমা ভাইয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আর কোনো দিন ভাইরে পাইতাম না। তোমরা আমার ভাইরে আইন্যা দেও।’
নিহত অন্য দুজন হলেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নওপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৩৪) ও সদর উপজেলার চুরখাই গ্রামের লিটন মিয়া (২৭)। বাকি দুজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন বলেন, সকালে শেরপুর থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ যাত্রী হয়ে ওঠেন। চেলেরঘাট এলাকায় বাসটির চাকা পাংচার হয়ে যায়। পরে বাসে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ অনেক যাত্রী নেমে অন্য বাসে উঠতে চেষ্টা করেন। একটি বাস এসে থামলে যাত্রীরা যখন উঠতে শুরু করবেন, তখন অন্য একটি বাস এসে যাত্রীদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন ও ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে একজন মারা যান। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।
থানা–পুলিশ আরও জানায়, চাকা ফেটে হওয়া বাসটি শেরপুর থেকে ঢাকাগামী একটি বাস। পরে যে বাসে লোকজন উঠতে যাচ্ছিল সেটি ভালুকার রাসেল স্পিনিং মিলের শ্রমিকদের বহন করা একটি বাস। এ দুটি বাস পুলিশ আটক করেছে। তবে যে বাসটি লোকজনকে চাপা দেয়, সেটি পালিয়ে গেছে। সে বাসের নাম জানা যায়নি।