নারায়ণগঞ্জে ২০ লাখ টাকায় হত্যা মামলা আপস

নারায়ণগঞ্জে ২০ লাখ টাকায় হত্যা মামলা আপস

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপক শফিফুর রহমান ওরফে কাজল জামানকে গুলি করে হত্যা মামলা ২০ লাখ টাকায় আপস হয়েছে বলে জানা গেছে। মামলার প্রধান আসামি শপিং কমপ্লেক্সের মালিক প্রভাবশালী আজহার তালুকদার। তবে পুলিশ বলছে, বিষয়টি তাদের জানা নেই।

মামলার বাদী আজহার তালুকদারের মালিকানাধীন আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের ভাড়াটে ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’ রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলী। নিহত শফিফুরের পরিবারের পরামর্শে আসামিপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

শুক্কুর আলী বলেন, ‘উনার (আজহার) সঙ্গে আমরা ২০ লাখ টাকায় মীমাংসা করে ফেলেছি।’ আদালতের মাধ্যমে মীমাংসা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা বসে মীমাংসা করেছি। আদালতের মাধ্যমে হয়নি। পরে আদালতে আপসের বিষয়টি মীমাংসা করা হবে।’

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আজহার তালুকদার ও তাঁর এক ভাই। ওই কমপ্লেক্সের নিচ ও দোতলার একাংশ ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’ রেস্তোরাঁর জন্য ভাড়া নেন শুক্কুর আলী। ওই রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক ছিলেন শফিফুর রহমান।
রেস্তোরাঁর বিদ্যুৎ ও পানির বিল নিয়ে শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আজহারের সঙ্গে শফিফুরের বিরোধ বাধে। এর জেরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আজহার তালুকদার উত্তেজিত হয়ে বাসা থেকে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র এনে শফিফুরকে পিস্তল দিয়ে একটি ও শটগান দিয়ে দুটি গুলি করেন। এতে শফিফুর পেটে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক দিন পর ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনার দিনই পুলিশ আজহার তালুকদার ও তাঁর ছেলে আফতাব তালুকদারকে আটক করে এবং লাইসেন্সকৃত পিস্তল ও শটগান জব্দ করা হয়। পরে রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলীর করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহত শফিফুর রহমানের এক স্বজন বলেন, আজহার তালুকদাররা খুবই প্রভাবশালী। মামলার বাদী ও নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ভয় দেখিয়ে তাঁরা বলেছেন এ মামলায় তাঁদের কিছুই হবে না। বাদীকে চাপ দিয়ে হত্যা মামলায় তাঁদের আপস করতে বাধ্য করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে কথা হয় নিহত শফিফুরের স্ত্রী আসমা জামানের সঙ্গে। স্বামীর প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পুরো পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি মনে হলেই কষ্টে বুকটা ভেঙে যায়।’ মামলার বাদী ২০ লাখ টাকা নিয়ে আপসের বিষয়টি জানতে চাইলে আসমা বলেন, ‘আমি টাকা পেয়েছি। ভাই (শুক্কুর আলী) সবকিছু করেছেন। তিনিই সব জানেন।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আজহার তালুকদার এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই মামলা তো ডিসমিস হয়ে গেছে। আমি জেলে থাকার সময় আমার ছোট ভাই সব ব্যবস্থা করেছে।’ গেল কোরবানির ঈদের আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন জানিয়ে আজহার তালুকদার বলেন, ‘একটা মহিলার জামাই মারা গেছে, ওরে যদি টাকাপয়সা না দেওয়া হয়, মরলে আল্লাহর কাছে কী জবাব দিব, বুঝলেন না! এ কারণে নিহতের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে মামলাটি মীমাংসা করা হয়েছে।’

মামলার বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমার সঙ্গে। তিনি বলেন, মামলা তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। বাদীর সঙ্গে আসামিপক্ষের আপসের বিষয়ে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’

আজহারের দুই অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল

শফিফুর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আজহার তালুকদারের দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। লাইসেন্স বাতিল চেয়ে ২৮ জুলাই জেলা পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন জানিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান। পরে পুলিশ সুপার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর চিঠি পাঠান।

১৪ আগস্ট অস্ত্র দুটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী বাইন (হীরা) প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের প্রতিবেদনের আলোকে অস্ত্র দুটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সব জায়গায় চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, অস্ত্রের ব্যালিস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে আজহার তালুকদারের লাইসেন্সকৃত পিস্তল থেকে গুলি ছোড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার গুলি করে হত্যার ঘটনায় শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আজহার তালুকদারের দুই অস্ত্র (পিস্তল ও শটগান) বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আজহার তালুকদার যে ঘটনায় তাঁর লাইসেন্সকৃত অস্ত্রটি ব্যবহার করেছেন, সে সময় তাঁর জীবন হুমকিতে ছিল না।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS