আফগানিস্তানের লিথিয়াম মজুতে চীনের চোখ, বিপুল বিনিয়োগের প্রস্তাব

আফগানিস্তানের লিথিয়াম মজুতে চীনের চোখ, বিপুল বিনিয়োগের প্রস্তাব

আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের খনিজ ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের কোম্পানি গোচিন দেশটির লিথিয়াম মজুত উন্নয়নে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আফগানিস্তানের গণমাধ্যম খামা প্রেসকে উদ্ধৃত করে ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই এ খবর দিয়েছে।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর তালেবান চীনকে বিনিয়োগের একটি সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করে।

খামা প্রেসের প্রতিবেদন বলছে, খনিজ ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শাহাবুদ্দিন দেলাওয়ার কাবুলে চীনা কোম্পানিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার পর জানিয়েছেন যে লিথিয়াম খনিতে বিনিয়োগ হলে ১ লাখ ২০ হাজার প্রত্যক্ষ এবং ১০ লাখ পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে।

চীনা কোম্পানিটি আগামী সাত মাসের মধ্যে সালাং পাস বা গিরিপথ মেরামত এবং আরেকটি টানেল তৈরি করারও প্রস্তাব দিয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

খামা প্রেস জানিয়েছে, গোচিন প্রস্তাব দিয়েছে যে লিথিয়াম আফগানিস্তানের ভেতরেই প্রক্রিয়াজাত করা হবে। এই কাজের জন্য একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরি এবং কুমার ও লাগমান সড়কে পিচ ঢালাই করা হবে।

আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর চীন নতুন শাসকদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে দেশটিতে তাদের প্রভাব বাড়িয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত আগের বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন অনেক দিন ধরেই আফগানিস্তানের বিশাল লিথিয়াম মজুতে বিনিয়োগ করতে চাইছিল। এই মজুতের সম্ভাব্য মূল্যমান এক লাখ কোটি ডলার।

তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি বিনিয়োগটিও এসেছে চীনের কাছ থেকে গত জানুয়ারি মাসে। তখন একটি চীনা কোম্পানি তেল উত্তোলনে ২৫ বছর মেয়াদি বেশ কয়েক মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করে। আমু তেল ক্ষেত্রের জন্য ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল আফগান খনিজ ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় এবং চায়না পেট্রোলিয়াম ইকোনমিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন রিসার্চ সেন্টারের মধ্যে।

চুক্তি অনুযায়ী, ওই প্রকল্পে আফগানিস্তানের অংশ হবে ২০ শতাংশ, যা ভবিষ্যতে ৭৫ শতাংশ হবে বলে খামা প্রেস জানায়। তবে চীনাদের ওপর দেশটিতে মাঝেমধ্যেই যে হামলার ঘটনা ঘটে, সে কারণে এ ধরনের বিনিয়োগে ঝুঁকি অনেক বেশি।

ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্স (আইএসকেপি) তালেবানদের ‘প্রাথমিক প্রতিপক্ষ’ হিসেবে নিজেদেরকে কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই গোষ্ঠী প্রতি মাসেই আফগানিস্তানে হামলা চালায় এবং তাদের সাম্প্রতিক বোমা হামলাগুলো আগের তুলনায় বেশি ধ্বংস ডেকে আনছে।

গত কয়েক মাসে আইএসকেপি বেশ কিছু হামলা চালিয়েছে। এসব হামলার মধ্যে রয়েছে জানুয়ারি মাসে কাবুলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চালানো হামলা, যাতে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ হতাহত হয়। তালেবান এমনকি কাবুলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। বিশেষ করে আইএসকেপি চীনাদেরকে বেশি লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। চীন অবশ্য বেশ কয়েকবারই নিরাপত্তা সহযোগিতার কথা তালেবানকে জানিয়েছে।

আইএসকেপি অনলাইনেও চীনের বিরুদ্ধে প্রচারণা করছে। তারা চীনাদের বিরুদ্ধে হামলার হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে উইঘুরদের মুক্ত করা তাদের অন্যতম লক্ষ্য বলে সম্প্রতি জানিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এই গোষ্ঠী কাবুলে এমন একটি হোটেলে হামলা চালায়, যেটি চীনের নাগরিকদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। ওই হামলায় পাঁচজন চীনা নাগরিক আহত হন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS