টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় বৃষ্টিহীন দেশ। তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। প্রচণ্ড গরমে খাবার ও ব্যবহারের পানি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। কোনো কোনো এলাকায় কয়েক বছর ধরে টানা পানির সমস্যা। গরমে সেই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এলাকাবাসী বলছেন, ঢাকা ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এ ছাড়া ওয়াসার দাবি, গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদনও কিছুটা কমে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলশানের শাহজাদপুরসহ এর আশপাশের এলাকায় তিনদিন ধরে পানি নেই। এসব এলাকার মানুষ পানির অভাবে ভোগান্তিতে দিন পার করছে। পানি না পেয়ে মানুষ ওয়াসার স্থানীয় অফিসে গিয়ে অভিযোগ জানালেও ঠিক হচ্ছে না।
মীর আবদুল আলীম নামে এক বাসিন্দা জানান, বনশ্রী ডি ব্লকের রেডিয়ান কৃষ্ণচূড়া (হাউজ-১, ২ রোড-৮) থেকে আশপাশের এলাকার গত তিনদিন ধরে পানি সরবরাহ নেই। সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কেউ সাড়া দিচ্ছে না। প্রায়ই ওয়াসার গাড়ি থেকে পানি কিনে নিতে হচ্ছে। কেনা পানিও আবার সবসময় পাওয়া যাচ্ছে না।
একই ধরনের অভিযোগ শাহজাদপুরের বাসিন্দা ইসরাত জাহান টুকুর। তিনি জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরেই পানির সমস্যা নিয়ে আছি। বাধ্য হয়ে ওয়াসা থেকে পানি কিনতে হেল্প লাইনে কল করি। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পানির এতটাই সংকট যে এখন ওয়াসার পানি কিনতেও পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানির সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। ওয়াসার পানির পাইপ বসানোর কাজ চলমান থাকায় কোথাও কোথাও পানির সংকট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। রাজধানীর ধানমন্ডি, আদাবর, শেখেরটেক, মেহেদীবাগ, মনসুরাবাদ, মিরপুর কাজীপাড়া, মোহাম্মাদিয়া হাউজিংয়ে পানির সংকটের কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
ধানমন্ডি ১৯ নাম্বারের বাসিন্দা হুমায়রা বেগম জানান, রমজানের শুরু থেকেই পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ওয়াসার লোকজন দিনে একবার (বিকেল ৫টার পর) পানি দিয়ে যায়। সেই পানি আবার নোংরা। তিন সপ্তাহ ধরে ওয়াসার পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। রমজানে পানির এ সংকটে ভোগান্তিটা একটু বেশি হচ্ছে।
শনির আখড়া, দনিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঘুরে দেখা যায় পানির সংকটের চিত্র। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা পানির সংকটে ভুগছেন।
দনিয়ার বাসিন্দা সাত্তার বলেন, বাড়ি করে বড় বিপদে আছি ভাই। পানির জন্য ভাড়াটিয়ার সঙ্গে দিনে একবার হলেও ঝগড়া লাগে। ওয়াসার পানি না পেলে আমি পানি কিভাবে দিব? ওয়াসাকে আমরা পানির বিল সময়মতো দেই। তবুও ঠিকঠাক পানি পাওয়া যায় না।
ঢাকা ওয়াসার রাজধানীতে চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন পানি উৎপাদিত হয় ১০ শতাংশেরও বেশি। তবে বিভিন্ন এলাকায় পানির পাইপ এবং পাম্প নষ্ট থাকায় এই বাড়তি পানি খুব বেশি কাজে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আসে না স্থানীয়দের। ফলে গ্রীষ্মকাল আসতে না আসতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় পানির তীব্র সংকট। ওয়াসার দৈনিক পানির উৎপাদন সক্ষমতা ২৬০ কোটি লিটার। ঢাকা শহরে ২১০ থেকে ২৪৫ কোটি লিটার পর্যন্ত চাহিদা থাকে। তবে গরমে চাহিদা বেড়ে যায় বলে জানিয়েছে ওয়াসা।
এ বিষয়ে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টি কম, এরমধ্যে জনসংখ্যা ও চাহিদা বাড়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামছে। এ ছাড়া লোডশেডিংসহ বিভিন্ন কারণে উৎপাদনও কিছুটা কম হচ্ছে। যার কারণে তীব্র গরমে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হচ্ছে কিছু জায়গায়। আমরা সমাধান করার চেষ্টা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় এখন ২৪ ঘণ্টা পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রচণ্ড গরমে লোডশেডিং হচ্ছে, এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কিছু জায়গায় সমস্যা হতে পারে।