ঢাকায় মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম (এমএএফ) এর আয়োজনে এক তারুণ্যের মেলায় এক মঞ্চে বক্তৃতা করেন দেশের প্রধান তিন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ‘রাজনৈতিক আলাপ চলবে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘তারুণ্যের মেলা’য় বক্তারা বলেন, মেধাবী তরুণদের রাজনীতিকে অংশগ্রহণ বাড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।
শুক্রবার দিনব্যাপী ঢাকার লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এ মেলায় প্রধান তিন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও জাতীয় ছাত্র সমাজের সদস্য ছাড়াও এতে অংশ নেন চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীরা।
ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ’স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যাডস্কেপ’ প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরিণ সক্ষমতা, বিশেষত যুব ও নারী নেতৃবৃন্দের দক্ষতার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৮টি এধরণের তরুণদের নিয়ে মেলা আয়োজন করা হয়েছে। তরুণদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়া এ মেলায় অংশ নিতে আগে থেকে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করতে হয়েছে। এতে অনলাইন প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফরম পলিটিক্স মেটারস ডট কম ডট বিডি (https://www.politicsmatters.com.bd/) ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত হয়ে অংশগ্রহণকারী তরুণ-তরুণীরা রাজনৈতিক জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন কোর্সে অংশ নেন। এসকল কোর্সের উপর কুইজ শো, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও ভিডিও বার্তাসহ বিভিন্ন সেশন শিক্ষার্থীরা উপভোগ করেন। বিজয়ীদের মাঝে তুলে দেয়া হয় ক্রেস্ট ও সনদ। এছাড়া ৮টি কোর্স সফলভাবে সম্পন্নকারী গ্রাজুয়েটরাও মেলা থেকে সনদ গ্রহণ করেন।
তারুণ্যের মেলায় তিনটি দল থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহম্মদ রাজু বলেন, ’সবার আগে দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে, তা না হলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে কিভাবে?’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র নেতৃত্ব বিকাশে দ্রুত ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান। রাজনৈতিক দলগুলোতে পারিবারতন্ত্র থেকে বেড়িয়ে আসা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলে, তার দলের বর্তমান চেয়ারম্যান সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন। তিনি তরুণদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা বিভিন্ন সময় তরুণদের নিজ স্বার্থে ব্যবহার করি, তারুণ্যের শক্তিকে আমরা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারিনা বলেই তারা কিছুটা রাজনীতি বিমূখ হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতির ভালো দিক আছে খারাপ দিকও আছে, শুধু খারাপ দিক নিয়ে কথা বললে আমরা সামনের দিকে এগুতে পারবো না।’ তিনি তরুদের প্রতি বলেন, ‘আই হেট পলিটিক্স’ বলবেন না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, জাতির পিতা সবসময় তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হলো তরুণরা, এরপরের ধাপ হলো স্মার্ট বাংলাদেশ। নবীন ও প্রবীনের সমন্বয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মতাদর্শের অমিল থাকলেও দেশের স্বার্থে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসনের, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ প্রশ্নে সবাইকে এক থাকতে হবে। তরুণদের জন্য আমরা আজ তিনটি দলের নেতারা এক মঞ্চে একত্রিত হয়েছি – এটাই হলো গণতন্ত্র প্রক্রিয়া। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এর সহায়তায় মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম এ অনুষ্ঠান আয়োজন করায় তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আগামীতে এধরণের সবদল নিয়ে অনুষ্ঠান আমরা নিজেরাই করবো।
তারুণ্যের মেলায় সমাপনী অনুষ্ঠানে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি ড্যানা এল. ওলডস্ আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরণের প্রোগ্রাম একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো যে – ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ হলেও এভাবে সহবস্থান সম্ভব। তিনি অতিথীদেরও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রাজনীতিতে তরুণদের উদ্ভুদ্ধ করা মানে হলো ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারকদের প্রতি বিনিয়োগ করা, রাজনীতিবিদদের এই সহবস্থান দেখে তরুণরা জানবে কিভাবে সহনশীলতা চর্চা করা যায়। এই আয়োজনে সহায়তা করার জন্য ইউএসএআইডি’কে ধন্যবাদ জানান তিন।
উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম ঢাকার সভাপতি ও বিএনপি’র ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ (রবিন), ফোরামের সহ-সভাপতি ও জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম খান জুয়েল এবং সঞ্চালনা করে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপকমিটির সহকারী সম্পাদক নুরজাহান আকতার সবুজ ও ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য নাদিয়া পাঠান পাপন। স্বাগত বক্তব্যে সংস্থার ডেপুটি চিফ অফ পার্টি লেসলি রিচার্ড মেলার আয়োজক মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামকে ধন্যবাদ জানান।