ডাকসু নির্বাচনে দুটি বিষয় কাজ করেছে: মির্জা আব্বাস

ডাকসু নির্বাচনে দুটি বিষয় কাজ করেছে: মির্জা আব্বাস

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি আশা করব, ওরা যেন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে এবং তাদের সিনিয়র নেতারা (জামায়াত) যদি ভুল পথে অগ্রসর হয়, সেখান থেকে বিরত রাখে।’

তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে দুটি বিষয় কাজ করেছে। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ২০০৮ সালের মতো। আবার ছাত্রলীগের ভোট। দেখেন এরা কত বড় মোনাফেকের দল। এদের কারণে ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছিল। দেশনেত্রী ২০০৮ সালে নির্বাচনে যেতে চাননি। মুজাহিদ সাহেব, আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন, নির্বাচনে নিয়ে গেলেন এবং তারপর কী হলো? জামায়াত ইসলামী থেকে ৫ জনের ফাঁসি হয়ে গেল। আমাদের থেকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীরও ফাঁসি হলো।’

আজ বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন মির্জা আব্বাস।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আব্দুল্লাহ আল নোমানের মতো একজন ভালো, সৎ, নির্মোহ রাজনৈতিক সঙ্গী পাওয়া বেশ ডিফিকাল্ট। এখানে যারা বসে আছেন তারা তিলে তিলে বুঝবেন একজন সৎ, নির্মোহ রাজনৈতিক কর্মী পাওয়া কত ডিফিকাল্ট। আমরা পেয়েছিলাম নোমান ভাইকে। একসঙ্গে মন্ত্রী ছিলাম, একসঙ্গে মিছিল করেছি, রাজপথে আন্দোলন করেছি। হাসিনাকে উৎখাত করেছি। বহু স্মৃতি নোমান ভাইয়ের সঙ্গে আমার।’

আব্দুল্লাহ আল নোমানকে বিএনপি যথাযোগ্য মূল্যায়ন করতে পারেনি ইঙ্গিত দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যখন অনুশোচনা কাজ করে। বিবেক বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, মন বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। তখন বলতে ইচ্ছে করে যে কাজটা ভুল হয়েছিল। নোমান ভাইয়ের এ দলের (বিএনপির) কাছ থেকে অনেক পাওনা ছিল। উনি যে কন্ট্রিবিউশন করেছেন সে অনুযায়ী বিএনপির কাছ থেকে উনার পাওনা ছিল। সেটা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল আমাদের। আমরা সেটা পালন করতে পারিনি। আমার যখন মনে হয় তখন নোমান ভাইয়ের ছেলেকে বলি, বন্ধু-বান্ধবকে বলি। নোমান ভাইয়ের সঙ্গে আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। হাসিনাবিরোধী আন্দোলন করেছি। এখন থাকলে হয়তো সামনের কোনো আন্দোলনে তিনি আমাদের সহযোগী থাকতেন।’

জিয়াউর রহমান দেশকে স্বাধীন করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শহীদ জিয়া দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি বিশ্বাস করি, একমাত্র বিএনপির হাতেই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিরাপদ।’

কারাবরণের স্মৃতিচারণা করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘প্রিয় ভাইয়েরা বহুদিন জেল খেটেছি। আমার সঙ্গে ছিলেন নিজামী, মুজাহিদ, ডা. তাহের সাহেব এবং যাদের ফাঁসি হয়েছে তারাও ছিলেন। আমি একদিন নিজামী সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম। উনার প্রতি সম্মান রেখে বলছি, উনি খুব জ্ঞানী ছিলেন। আপনারা কেন নির্বাচনে গেলেন? নিজেরাও গেলেন, আমাদেরও নিয়ে গেলেন। উনি নীরব থাকলেন। কিছুই বললেন না। দুর্ভাগ্য, ওই নির্বাচন উনাদের ফাঁসির দিকে নিয়ে গেল। তাদের এত নেতার ফাঁসি হলো। তার পরও আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের পিরিত ছোটে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ নির্বাচনেও (ডাকসু) তারা ইন্ডিয়াতে বসে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে জামায়াতকে ভোট দিতে হবে। অর্থাৎ বিএনপিকে ধ্বংস করলে পরে আর কোনো সমস্যা থাকে না জামায়াত ইসলামের। সুতরাং আমাদের ভুলত্রুটি যা হয়েছে, তা সংশোধন করে সামনে আরো কঠিন পরীক্ষা আছে। দল-মত-নির্বিশেষে, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের সভাপতিত্বে এতে বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক নসরুল কদির, মরহুম আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমানসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS