ভারত ফ্যাসিস্টকে আশ্রয় দিয়ে নিজেদেরকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে: দুদু

ভারত ফ্যাসিস্টকে আশ্রয় দিয়ে নিজেদেরকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে: দুদু

ভারত একজন ফ্যাসিস্টকে আশ্রয় দিয়ে নিজেদেরকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ভারতকে আমরা বন্ধু রাষ্ট্র মনে করি। কিন্তু ভারত কি বাংলাদেশকে বন্ধু রাষ্ট্র মনে করে? ভারত যা করছে, তাতে ভারত যে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র সেটি বলা খুব কঠিন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের লুটেরা, গণহত্যাকারী, বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করার মুক্তিযোদ্ধাবিরোধী শক্তি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। এতে ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের দাবি করতে পারে না। ভারত একজন ফ্যাসিস্টকে আশ্রয় দিয়ে নিজেদেরকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত ভারতে মুসলিম নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।   

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা ফ্যাসিস্টকে রুখে দিয়েছি। আমাদের দেশে তার (শেখ হাসিনা) জায়গা হয়নি। তাকে আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি। সে জীবন বাঁচানোর জন্য শুধু ভারত পালায়নি, তার আসল ঠিকানাই হচ্ছে ভারত। আমরাতো হোসেন মোহাম্মদ এরশাদকেও পরাজিত করেছিলাম। সে কিন্তু ভারতে যায়নি। সে জেলখানায় গিয়েছিল। ভারত বলছে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য তারা আশ্রয় দিয়েছে। মূলত রক্ষা নয়, শেখ হাসিনার আদর্শ হচ্ছে ভারত এবং তার ঠিকানাও ভারত। সেজন্য সে ভারতে গেছে। তাকে জায়গা দিয়ে ভারত নিজেদেরকে গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি কখনো দাবি করতে পারে না। একজন ফ্যাসিস্ট শুধু ফ্যাসিস্টের সাথেই থাকতে পারে।      

দুদু বলেন, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভারত আমাদেরকে নানাভাবে উসকানি দিচ্ছে। ভারত এদেশে গণতন্ত্রবিনাশি শক্তিকে শুধু রাখেনি, এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করেছে। ভারত শেখ হাসিনার মধ্য দিয়ে তিনটা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছিল বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনী ব্যবস্থা নেই। সে (শেখ হাসিনা) নির্বাচনের নামে জালিয়াতি করেছে। সে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস এবং গণতন্ত্র ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সব অর্থে ভারতের ক্রীতদাসে পরিণত করেছিল। হয়তো আরেকটু সময় পেলে বাংলাদেশকেও ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলতো।

বিএনপির এ নেতা বলেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য নানাভাবে, নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেজন্য আমি বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনাদের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে, এ দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। যেটা বিএনপি বারবার আপনাদের বলছে। সেই উদ্যোগ না নিলে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখা কঠিন হবে। আর জনগণ ঐক্যবদ্ধ না থাকলে, ভারতের জন্য সুবিধা হবে৷

তিনি বলেন, সেজন্যে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় মানুষকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। মানুষের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার ক্ষমতা দিতে হবে। সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যা শুধু দেশকে রক্ষা করতে পারবে এবং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে  পারবে।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমি দেশ, দল এবং নিজের পক্ষ থেকে ভারতের অগণতান্ত্রিক পৈশাচিক ভূমিকার প্রতিবাদ জানাই। ভারত সম্প্রতি নিজেদের সারা বিশ্বে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরেছে। এতটাই নির্মম রাষ্ট্র শুধু মুসলমানদের হত্যা করছে তা নয়, সেই দেশের নিম্নমানের হিন্দু এবং নানা জাতি-উপজাতির ওপরে তার আক্রমণ করছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় ৫০ হাজারের ওপরে নারী, পুরুষ এবং শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। ইসরাইলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে, ইসরায়েলের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতেও যে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তখন ভারত আমাদের জায়গা দিয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করেছে। সেজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আছি। কিন্তু সেই দেশ যখন নির্বিচারে নারী পুরুষ এবং মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, তখন এটি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।

‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপত্বিতে নাগরিক সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসন উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রদান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার ও কৃষকদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এস কে সাদি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS