কখনো কি এমন হয়েছে, পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে পেটে চাপ দিয়েছে? কিংবা প্রেজেন্টেশন অথবা ইন্টারভিউয়ের আগে বমি বমি ভাব হচ্ছে? গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করার আগে পেটে চাপ পরার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু চাপ তো পড়ছে মস্তিষ্কের ওপর, তার সঙ্গে পেটে চাপ পড়ার সম্পর্ক কী?
মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপকে ধরা হয় ব্যস্ত জীবনের বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে। কাজ, পড়াশোনা, ব্যক্তিগত বিষয়াদি যখন একের পর এক চাপ তৈরি করে শরীরের ওপর, তখন অজান্তেই সে চাপ পড়ে মনের ওপর। এই মানসিক চাপ শুধু মস্তিষ্কে আঘাত হানে না, তার প্রভাব পড়ে পেটের ওপরও। এমনকি পেটের যেকোনো সমস্যার প্রভাবও পড়ে মস্তিষ্কের ওপর।
কথায় আছে, পেট শান্তি তো সব শান্তি। পেট আর মন যেন একে অপরের পরিপূরক। যদি পেট অশান্ত থাকে, তাহলে তার প্রভাব মনে পড়তে বাধ্য। ভেবে দেখুন তো, পেটব্যথায় যদি শরীর কাতরায়, মন কি ভালো থাকবে? আবার তার যদি ঠিক উল্টোটা হয়? যদি মন অশান্ত থাকে, তার প্রভাব পড়তে পারে পেটে। পুরো ঘটনার পেছনে কাজ করছে পাকস্থলীর নিজস্ব নার্ভাস সিস্টেম। পাকস্থলীতে যে নার্ভাস সিস্টেম রয়েছে, তার সঙ্গে মস্তিষ্কের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
মস্তিষ্কের ওপর যখন চাপ বৃদ্ধি পায়, তখন শরীর ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ মুডে চলে যায়। তখন খাবার হজম করার চেয়ে মনকে শান্ত করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে পাকস্থলীতে প্রয়োজনীয় এনজাইম, দরকারি ব্যাকটেরিয়া বেশির ভাগই ঠিকমতো তৈরি হয় না। ফলে মন অশান্ত থাকলে তার প্রভাব পড়তে পারে পেটের ওপর।
আবার উল্টোটাও আছে। সেরেটোনিনকে বলা হয় মস্তিষ্কের হ্যাপি হরমোন। শরীরের ৯০ ভাগ সেরেটোনিন সংশ্লেষিত হয় পাকস্থলীতে। পাকস্থলী যখন অস্থির থাকে, তখন সে প্রয়োজনের অনেক কম পরিমাণ সেরোটোনিন উৎপাদন করে। ফলে মানসিক চাপও বৃদ্ধি পায়।
কখনো কি এমন হয়েছে, যে খাওয়াদাওয়ায় কোনো অনিয়ম হয়নি, পেটে তেমন চাপ পড়েনি। অথচ পেট অস্থির হয়ে রয়েছে। কোনোভাবেই সারছে না? পেটের এই চাপ তৈরি হতে পারে মানসিক চাপ থেকে। যে কারণে পেট ও মাথা দুটি একই সঙ্গে শান্ত রাখা প্রয়োজন। তবেই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারবে। কিন্তু সেটা কীভাবে?
১। যেসব খাবারে ফাইবার বেশি, অর্থাৎ ফল, শাকসবজি জাতীয় খাবার বেশি বেশি গ্রহণ করুন।
২। আলট্রাপ্রসেসড ফুড, যেমন ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংকস–জাতীয় খাবার পারতপক্ষে এড়িয়ে চলুন।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
১। মানসিক চাপ সামলে রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। রাতে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমালে মস্তিষ্ক চাপমুক্ত থাকবে।
২। শারীরিক চাপ যাতে মনের ওপর প্রভাব না ফেলে, সে জন্য দৈনিক কিছুটা সময় হলেও ব্যায়াম করুন। শরীর নিয়মিত সচল থাকলে পেটও শান্ত থাকে।
৩। পেট ও মন শান্ত রাখতে মেডিটেশনের সাহায্য নিতে পারেন। এতে ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ কমে আসে।
তথ্যসূত্র: জেফারসন হেলথ ও হার্ভার্ড হেলথ