অনেক বাগানিরই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় গাছের হলুদ পাতা। কারণ এই সময় সঠিক যত্ন না নিলে এভাবে সব পাতা হলুদ হতে হতে গাছ মারাও যেতে পারে। গাছের হলুদ পাতার সমস্যাকে বলে ক্লোরোসিস (Chlorosis)। পাতায় থাকা ক্লোরেফিলের কারণেই পাতা সবুজ দেখায়, যার উপস্থিতিতে সূর্যের আলো আর কার্বন ডাই-অক্সাইডের সাহায্যে গাছ অক্সিজেন ও গ্লুকোজ (গাছের খাবার) তৈরি করে। গাছে পানি বেশি বা কম দেওয়া কিন্তু গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ।
এবার প্রশ্ন উঠতে পারে কীভাবে বুঝবেন পানি কম বা বেশি হচ্ছে?
যদি পরবর্তীতে পানি দিতে গিয়ে দেখেন মাটি একেবারে খটখটে শুকনো এবং গাছের পাতাগুলো নুয়ে পড়ছে তাহলে বুঝবেন পানির প্রয়োজন। আর পাতা ঝরে পড়া, কাণ্ড নরম হয়ে আসা, মাটি অনবরত ভেজা থাকলে বুঝবেন আপনার গাছকে এবার কম পরিমাণে পানি দিতে হবে। মাটির ওপরের ২-৩ ইঞ্চি পুরোপুরি শুকনো অবধি অপেক্ষা করুন। তারপরই আবার গাছে পানি দেবেন।
রুট বাউন্ড হয়ে যাওয়ার কারণেও কিন্তু গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। অর্থাৎ বড় গাছ যেমন জবা, আলমন্ডা, গোলাপ প্রভৃতি গাছের ক্ষেত্রে ১-২ বছর পরপর শিকড়, কাটাই-ছাটাই করা প্রয়োজন। শিকড় যদি জড়িয়ে যায় তাহলে গাছ প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। বসন্ত বা বর্ষাকাল শিকড় কাটাই-ছাটাই করার আদর্শ সময়।
গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া কিন্তু খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। যদি সপ্তাহে একটা সুস্থ গাছে দুই-তিনটা পাতা হলুদ হয় তাহলে বুঝবেন এটা পুরোপুরি স্বাভাবিক ঘটনা। বেশিরভাগ গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, পুরানো পাতাগুলো মারা যায়, হলুদ হয়ে যায় এবং অবশেষে ঝরে যায়। এগুলো নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবেও গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট বা এপসম সল্ট ১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করুন ১৫ দিনে ১ বার। মাটিতেও দিতে পারেন।
আয়রনের অভাব থাকলেও গাছের পাতা হলুদ হয়। এক্ষেত্রে চিলেটেড আয়রন দিতে হবে আপনাকে। ১ লিটার পানিতে ১ গ্রামের থেকে সামান্য কম গুলে গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে আর মাটিতে দিয়ে দিতে হবে।
সঙ্গে টবের গাছে নিয়মিত খাবার দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। ২ থেকে ৩ মাস বাদে বাদে গাছে ভার্মি কম্পোস্ট বা গোবর সার বা পাতা পচা সার দিন। সঙ্গে জৈব বা রাসায়নিক সারও দিতে হবে মাসে ১বার করে। গাছকে পোকামাকড় বা ফাঙ্গাসের হাত থেকে বাঁচাতে দিতে হবে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকও।