জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যারা ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ তাদের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী কেউ কেউ নিজ এলাকায় খোদ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। এমন কর্মকাণ্ড বিএনপি-জামায়াতকে রাজনীতির মাঠে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও।
নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গত শনিবার আয়োজন করা হয় একটি জনসমাগমের, ব্যানার লেখা ছিল আওয়ামী লীগের জনসভা, তবে মঞ্চে নেতাদের বক্তব্যে তার কোনো ছোঁয়া নেই— উল্টো নিজ দলের নেতাকর্মী এবং সংসদ সদস্যের নামেই বিষোদগার করা হয়েছে মঞ্চ থেকে। আওয়ামী লীগের ব্যানারে আওয়ামী লীগের সমালোচনাই মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের।
ক্যাপশন : উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাফর আহমেদ চৌধুরী এবং দুর্নীতির অভিযোগে ২০২০ সালে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ হারানো জামাল উদ্দিন।
দলের শীর্ষ নেতারা যখন আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দলের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় জোর দিচ্ছেন— তখন এমন জনসভার আয়োজকদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ দায়িত্বশীলরা। এই সভার বিষয়ে কিছুই জানতেন না তারা।
তাদের মতে, সভায় উপস্থিত হওয়া প্রায় সবাই দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বার্থান্বেষী মহল। বেশির ভাগই সাবেক এবং দলের আস্থা হারানো নেতা। এখন দলের ঐক্য ভেঙে নিজেদের স্বার্থ হাসিলই তাদের আসল উদ্দেশ্য। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাফর আহমেদ চৌধুরী। ওই সভায় প্রধান অতিথি করা হয় দুর্নীতির অভিযোগে ২০২০ সালে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ হারানো জামাল উদ্দিনকে। এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বিতর্কিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান মানিক।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ খান সোহেল বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বৈধ যে কমিটি রয়েছে, তাদের বাইরে দলের ব্যানারে কেউ সভা করতে পারবে না। দলে এমন সুযোগ নেই।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, যদি দলের শৃঙ্খলার বাইরে কেউ কোনো কথা বলে, কেউ যদি অবস্থান নেয়, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। দলের কারও বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য থাকলে জেলার ফোরামে বলবে, কেন্দ্রীয় ফোরামে বলতে পারে তারা।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম সেলিম বলেন, আসলে তারা অপরাজনীতি করছে। তারা দলটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তারা যে মিটিং করেছে, তা উপজেলা লেভেলে বা জেলা লেভেলে কাউকে জানায়নি। তারা যদি দলের হতো তাহলে অবশ্যই আমাদের জানাতো।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম বলেন, একটি গোষ্ঠী গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্যই দলের ঐক্য ভাঙার অপচেষ্টা করছে তারা। তারা যদি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হয়ে থাকে বা নির্বাচনে দাঁড়াতে চায় তাহলে তো তাদের বক্তব্য হবে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে।
এই উপজেলায় গত নয় বছরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দ কেউ উচ্চারণ করেনি। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই সময়ে যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইছে মূলত তারা বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সংসদ সদস্য তথা কমিটির বিরুদ্ধে কথা বলছে। এমনকি তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের ভাইয়ের কথাও শুনছে না বলে জানান তিনি।
নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এসব স্বার্থান্বেষীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, সমালোচনা হতে হবে গঠনতান্ত্রিক উপায়ে। সংসদ সদস্যদের সমালোচনার নামে তৃণমূলে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা কখনও সংগঠন সমর্থন করবে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড আত্মঘাতী। অনেক সময় প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কথা বলে। এতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা সুযোগ পেয়ে থাকে বলে জানান তিনি। এজন্য দলের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য কোনো কিছু বলা যাবে না বলে হুঁশিয়ার করে দেন মাহবুবুল আলম হানিফ।
তার মতে, প্রকাশ্যে দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কারও বক্তব্য দলের জন্য আত্মঘাতী।
এ সময় তিনি গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ থেকে বিশৃঙ্খলাকারীদের শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানান। দল মনোনীত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলেও স্মরণ করিয়ে দেন কেন্দ্রীয় এ নেতা।