News Headline :
সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ঘিরে উত্তেজনা ন্যায়বিচারটা দেখতে চাই, ট্রাইব্যুনাল প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বই ছাপাতে অসহযোগিতা করেছে বিগত সরকারের অসাধু চক্র: প্রেস উইং মোদীর সফর ঘিরে হত্যার ঘটনায় হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গণহত্যা-গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল মা-ছেলে একসঙ্গে দেশে ফিরবেন, প্রত্যাশা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিয়ে নিয়ে সমালোচনা ও নতুন স্ত্রীকে নিয়ে যা বললেন তাহসান বিয়ের ৩৩ বছর পর ধর্ম বদলালেন শাহরুখের স্ত্রী গৌরী! বেঙ্গালুরুতে সন্তানদের বিষ খাইয়ে ফাঁস নিলেন দম্পতি ফ্ল্যাট বিতর্কে পদত্যাগের চাপে টিউলিপ সিদ্দিক
ভারতে ৪০ দিন ধরে অনশনে কে এই কৃষকনেতা দালেওয়াল?

ভারতে ৪০ দিন ধরে অনশনে কে এই কৃষকনেতা দালেওয়াল?

ভারতে ৭০ বছর বয়সী এক কৃষক নেতা ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে অনশন ধর্মঘটে রয়েছেন। প্রতিবাদরত কৃষকদের বিভিন্ন দাবি পূরণে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি এ ধর্মঘট করছেন।

ওই কৃষক নেতার নাম জগজিৎ সিং দালেওয়াল। চিকিৎসকরা বলছেন, তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। তিনি কথা বলতে পারছেন না। তবে তিনি ও তার সমর্থকরা চিকিৎসা সেবা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

গত মাসে দালেওয়ালকে যেন হাসপাতালে নেওয়ার আদেশ দেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এই কৃষক নেতা পাঞ্জাবের। আর পাঞ্জাব রাজ্য সরকারকেই এ আদেশ দেন আদালত। এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একাধিক শুনানি হয়েছে।

দালেওয়ালের অনশন ধর্মঘট একটি বিক্ষোভের অংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। তখন হাজার হাজার কৃষক পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন।  

কৃষকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট ফসলের জন্য নিশ্চিত মূল্য, ঋণ মওকুফ এবং পূর্ববর্তী আন্দোলনের সময়ে মারা যাওয়া কৃষকদের পরিবারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ।

এরপর থেকে তারা বেশ কয়েকবার রাজধানী দিল্লির দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার কয়েকটি প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী তাদের থামিয়ে দেয়।

ভারতের কৃষকদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার জন্য ব্যাপক প্রতিবাদ এবারই প্রথম নয়। ২০২০ সালে কৃষকেরা দিল্লি সীমান্তে আন্দোলন করেন। তাদের এই আন্দোলন ছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকারের প্রবর্তিত তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে।

তখন সরকারের দাবি ছিল, এই আইনগুলো কৃষিপণ্য বিক্রিতে সংস্কার আনবে এবং কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য উপকারী হবে। কিন্তু কৃষকদের যুক্তি ছিল, এতে তারা শোষণের শিকার হবেন।

অবশেষে আইনগুলো বাতিল করা হয়। তবে প্রতিবাদরত কৃষকরা বলেন, সরকার ২০২০ সালে তাদের বাকি দাবিগুলো এখনও পূরণ করেনি।

জগজিৎ সিং দালেওয়াল কে?

দালেওয়াল পাঞ্জাবের বাসিন্দা। রাজ্যটি কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপকভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তবে সেখানে কৃষি আয়ের ধারাবাহিক হ্রাস দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কৃষকদের ঋণের জালে ফেলার পাশাপাশি আত্মহত্যা এবং অভিবাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

অনশনরত দালেওয়াল একটি কৃষক সংগঠনের নেতা। সংযুক্ত কৃষক মোর্চার সঙ্গে তার এই সংগঠনের কিছুটা যোগ রয়েছে। কৃষক মোর্চা কয়েক ডজন ইউনিয়নের একটি জোট, যেটি ২০২০ সালের আন্দোলন সমন্বয় করেছিল।

তিনি এর আগে পাঞ্জাবে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন এবং আত্মহত্যা করা কৃষকদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করেন।  

২০১৮ সালে তিনি দিল্লির দিকে আন্দোলনরত কৃষকদের ট্রাক্টরের একটি বহরের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আন্দোলনে ২০০৪ সালের একটি সরকারি প্যানেলের সুপারিশ অনুযায়ী কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য লাভজনক মূল্য এবং কৃষি ঋণ মওকুফের দাবি জানানো হয়েছিল।

গত নভেম্বরে অনশন শুরুর আগে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দালেওয়ালকে হাসপাতালে নেয় রাজ্য পুলিশ। তবে তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই বিক্ষোভে ফিরে আসেন। তখন তিনি দাবি করেন, তাকে হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছিল।  

মোদীকে একটি চিঠিতে তিনি লেখেন, তিনি কৃষকদের মৃত্যুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ‘নিজের জীবন উৎসর্গ’ করতে প্রস্তুত।

এবারের আন্দোলনে আলাদা কী? 

দাবির দিক থেকে আগের আন্দোলনগুলোর চেয়ে এবার তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। কৃষকেরা তাদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনগত নিশ্চয়তা, ঋণ মওকুফ, কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকদের জন্য পেনশন, বিদ্যুৎ বিল না বাড়ানো, জমি অধিগ্রহণ আইন পুনঃস্থাপন এবং আন্দোলনে মারা যাওয়া কৃষকদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিক্ষোভ করছেন।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এবারের আন্দোলনে মোদী সরকারের প্রতিক্রিয়া জানানোর পদ্ধতিতে একটি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।  

২০২০ সালের আন্দোলনে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছিল। ভারতের তৎকালীন কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি শীর্ষ কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন কৃষকরা দিল্লির দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন, তখন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাদের নেতাদের সঙ্গে দুই দফা আলোচনা করেন। কিন্তু সফলতা আসেনি।

তবে তারপর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার আন্দোলন থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে বলে মনে হচ্ছে। গত সপ্তাহে কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, তিনি আন্দোলনরত কৃষকদের আলোচনা জন্য ডাকবেন কি না। জবাবে তিনি বলেন শীর্ষ আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সরকার সেই নির্দেশনা অনুসরণ করবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার এবার একটু সাবধানী ভূমিকায় রয়েছে যেন ২০২০ সালের আন্দোলনের মতো না হয়। ওই বছরের অক্টোবরে তৎকালীন কৃষিসচিব এবং কৃষক ইউনিয়নের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উল্টো ফল আসে। এই ঘটনা বছরের পর বছর চলতে থাকা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে।

এরপর কী?

কৃষকদের দাবিগুলো দেখতে গত সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট কমিটি গঠনের আদেশ দেন। কমিটি গত নভেম্বরে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে কৃষকদের তীব্র দুর্দশার চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে কৃষকদের অত্যন্ত কম মজুরি এবং বিশাল ঋণের বোঝার বিষয়টি উঠে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালের পর থেকে চার লাখেরও বেশি কৃষক ও কৃষি শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন। সেই সময় থেকেই ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। কমিটি কৃষকদের জন্য সরাসরি আয় সহায়তা দেওয়াসহ কিছু সমাধানও প্রস্তাব করে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যানেলটি কৃষি আয় বাড়ানোর জন্য সমাধানগুলো পর্যালোচনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। জানুয়ারিতে কমিটির বিভিন্ন কৃষক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরিকল্পনা ছিল।

কিন্তু কৃষকদের কয়েকটি গোষ্ঠী তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের দাবি আলোচনা তাদের কোনো উপকারে আসছে না। বরং কমিটির উচিত কৃষকদের আন্দোলনের নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করা। 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS