আজীবন ফুটবল ক্লাব লিভারপুলের সমর্থক ছিলেন জন আলফ্রেড টিনিসউড। তার জন্মের মাত্র ২০ বছর আগে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯০১ ও ১৯০৬ ছাড়া ক্লাবটির জেতা সবকটি ট্রফির ম্যাচই দেখেছেন তিনি।
টিনিসউডের পরিচয়, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী পুরুষের খেতাব পেয়েছিলেন। গত সোমবার যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টের এক কেয়ার হোমে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে টিনিসউডের বয়স হয়েছিল ১১২ বছর। তার পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ১১৪ বছর বয়সে ভেনেজুয়েলার হুয়ান ভিসেন্ট পেরেজ মোরার মৃত্যু হলে টিনিসউড বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তির খেতাব দখলে নেন। ওই মাসেই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে এ স্বীকৃতি দেয়।
১৯১২ সালে আটলান্টিকের শীতল পানিতে ডুবে গিয়েছিল সেই সময়ের সবচেয়ে বড় জাহাজ টাইটানিক। ওই বছরের ২৬ আগস্ট যুক্তরাজ্যে জন্ম নেন টিনিসউড। ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হন তিনি।
টিনিসউডের পরিবার জানায়, শেষদিন তার চারপাশ সংগীত ও ভালোবাসায় মুখর ছিল। এক বিবৃতিতে পরিবার বলেছে, তার অনেক গুণ ছিল। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সাহসী, যেকোনো সংকটে শান্ত, গণিতে দক্ষ এবং অসাধারণ কথোপকথনকারী।
পরিবার আরও জানায়, এসব গুণ তাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়্যাল আর্মি পে কর্পসে তার সামরিক জীবনে দারুণ সহায়তা করেছিল। সেখানে তিনি হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষার পাশাপাশি আটকে পড়া সৈন্যদের সন্ধান এবং খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার মতো কাজে যুক্ত ছিলেন।
১৯৪২ সালে লিভারপুলে নাচের এক অনুষ্ঠানে ব্লডওয়েন নামে এক নারীর সঙ্গে তার দেখা হয় টিনিসউডের। পরে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৩ সালে তাদের মেয়ে সুসানের জন্ম হয়। টিনিসউডের দাম্পত্যজীবন ছিল ৪৪ বছরের। পরে ১৯৮৬ সালে তার স্ত্রী মারা যান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টিনিসউড রয়েল মেইলে কাজ করেন। পরে তিনি জ্বালানি কোম্পানি শেল অ্যান্ড বিপিতে অ্যাকাউন্ট্যান্টের চাকরি নেন এবং ১৯৭২ সালে অবসরে যান।
জীবিত থাকাকালে টিনিসউড বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি কিশোর-তরুণ বয়সে বেশ সক্রিয় ছিলেন এবং অনেক হাঁটাহাঁটি করতেন, তবে তিনি নিজের দীর্ঘায়ুর রহস্য সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমি অন্য সবার মতোই সাধারণ। আপনি হয় দীর্ঘ জীবন পাবেন, নয়তো ছোট- আর এ বিষয়ে বেশি কিছু করারও থাকে না।
২০১২ সালে ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে তিনি প্রতি বছর ব্রিটিশ রাজদরবার থেকে একটি জন্মদিনের কার্ড পেয়ে আসছিলেন। প্রথমে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে কার্ড পান। রানির মৃত্যুর পর পেতেন রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে।
বিশ্বের সবচেয়ে বয়সী মানুষ ছিলেন জাপানের জিরোইমন কিমুরা। ১১৬ বছর ৫৪ দিন বেঁচে থাকার পর ২০১৩ সালে তার মৃত্যু হয়। জাপানের ১১৬ বছর বয়সী তোমিকো ইতোকা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়সী নারী ও মানুষ।