টগর প্রায় বায়না করে তাকে চকোলেট কিনে দেওয়ার। চকোলেট বা বিস্কুটের ক্রিম শিশুদের দাঁতের জন্য কতটা ক্ষতিকর, সেটা ভুলে গেলে চলবে না।যদি দেখেন শিশুর প্রায়ই দাঁতে ব্যথা হচ্ছে, তা হলে বুঝতে হবে দাঁত ও মাড়িতে সংক্রমণ হতে শুরু করেছে। অনেককেই বলতে শুনবেন, দাঁতে পোকা হয়েছে। কিন্তু দাঁতে কি আদৌও পোকা হয়? দন্ত চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, দাঁতে পোকা বলে কিছু হয় না। এটাকে বলা হয় ডেন্টাল ক্যারিস। এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ যা দাঁতের ক্ষয় করতে থাকে। সেই কারণেই দাঁতে ব্যথা হয়।
খাবার মুখের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ রেখে দেওয়ার অভ্যাস অনেক শিশুরই থাকে। তা ছাড়া ভালো করে না চিবিয়ে খাবার গিলেও ফেলে অনেক শিশু। এর ওপর দেদার চকোলেট, মিষ্টি, আইসক্রিম, ক্রিম দেওয়া বিস্কুট খাওয়া তো রয়েছেই। আর এই সুযোগ নিয়েই মুখের মধ্যে বসবাসকারী জীবাণুরা ওই খাবারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিডে দাঁত ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে গর্ত তৈরি হয়। তাই কম বয়স থেকেই যদি সন্তানের দাঁতের যত্ন নিতে শুরু না করেন, তা হলে পরে খুদেকেই ভুগতে হবে বিভিন্ন সমস্যায়।
যে লক্ষণ দেখে বুঝবেন দাঁত ও মাড়িতে সংক্রমণ হচ্ছে?
প্রথমে দাঁতের ওপর কালো বা বাদামি ছোপ পড়বে। বাবা-মায়েরা খেয়াল করে দেখবেন, দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করলে ক্রমশ এই রং গাঢ় হতে থাকবে। গরম, ঠান্ডা বা মিষ্টি খেলে শিরশিরানি অনুভূতি হবে। এই সময়েই চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া জরুরি। নইলে পরে প্রচণ্ড ব্যথায় রাতের ঘুম নষ্ট হতে পারে। পরবর্তী কালে ব্যথার চোটে মুখও ফুলে যেতে পারে।
কীভাবে দাঁতের যত্ন নেবেন?
* প্রতিদিন দুই বেলা দাঁত মাজার অভ্যাস করান শিশুকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতের খাবার খাওয়ার পর।
* পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে শিশুকে। শরীরে যেন পানির অভাব না হয়।
* খাবার চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। শিশু যেন মুখের মধ্যে অনেকক্ষণ খাবার রেখে না দেয়, লক্ষ করবেন।
* মিষ্টিজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। ঘন ঘন চকোলেট কিনে দেবেন না।
* বাইরের খাবার, ভাজাভুজি শিশুকে দেবেন না। ঘরে তৈরি কম তেলে রান্না খাবার দিন। শিশুকে চকোলেট না দিয়ে বিভিন্ন রকম বাদাম খাওয়ান। কাঠবাদাম, ব্রাজিল নাট ও কাজু দাঁতের জন্য বেশ ভালো। বাদমে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। পাশাপাশি বাদামে থাকে ভিটামিন ডি, যা দাঁত ভালো রাখে।
* নরম পানীয় খেতে খুবই পছন্দ করে খুদেরা। কিন্তু এই নরম পানীয়ে থাকে অতিরিক্ত চিনি। কিছু ক্ষেত্রে থাকে অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইডও। তাই এই ধরনের পানীয় দাঁতের জন্য বিপদ ডেকে আনে। নরম পানীয়ের বদলে দুধ খেতে উৎসাহ দিন। ঘরেই তৈরি করে দিন ফলের রস।
* শিশুর দাঁতে বাদামি বা কালো ছোপ দেখলেই দন্ত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সম্ভব হলে ছয় মাস পর শিশুর দাঁতের পরীক্ষা করাবেন।