গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এই দেশে আর কেউ ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর ডি-ব্লক ঈদগাহ মাঠে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ স্মরণে আয়োজিত সভায় তিনি এ কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ছাত্ররা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে। ছাত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। গত ১৫ বছর ধরে আমরা লড়াই করেছি। তার আগে থেকে ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে কায়েম আছে। যে সরকারে যায়, আমাদের জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়।
তিনি বলেন, তার (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। এ লড়াইয়ের কাফেলায় জুলফিকার শাকিল এসে যোগ দিয়েছিলেন, দায়িত্ব নিয়েছিলেন। রোববার ৪ আগস্ট শাকিল মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে যুবলীগের লোকদের গুলিতে মাথায় আঘাত পেয়ে ৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শাকিলসহ সব শহীদের প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাই। জুলফিকার শাকিল ছাত্র ফেডারেশনেরকে যে গৌরব ও মহিমা দিয়ে গেছেন, যুগ-যুগান্তর এ সংগঠন তাকে স্মরণে রাখবে। শাকিল স্বপ্ন দেখেছিলেন, ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন ঘটবে। দেশে নাগরিকের সামাজিক মর্যাদার একটা সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। এ দেশে আর কেউ ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা কায়েম করতে পারবে না।
হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়ে সাকি বলেন, দিনের পর দিন গুম, খুন, নির্যাতন করে ও হাজার-লাখ বিরোধী নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার টিকে থাকতে চেয়েছিল। আবু সাঈদের সেই ভয় ভাঙানো বুক টান করে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে কোটি ছাত্র আন্দোলনে শামিল হন।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রের সর্বশক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল। তাদের কোনো ক্ষমা নেই। যারা আমাদের সন্তানদের গুলি করেছে, হত্যা করেছে, তারা বিনা বিচারে পার পেতে পারবে না। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে এ হত্যাকারীদের বয়কট করতে হবে। তরুণরা তাদের জীবন উৎসর্গ করে আমাদের সবার ওপরে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশে আর কাউকে ফ্যাসিস্ট হতে দেওয়া যাবে না।
বন্যার কথা উল্লেখ করে সাকি বলেন, ফেনী থেকে নোয়াখালী, কুমিল্লা কিংবা চট্টগ্রাম বিরাট অংশের মানুষ আজ পানিবন্দি। বন্যায় আক্রান্ত। ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিটি মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়ানো দরকার। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই একত্রিত হয়ে আমাদের সম্পদ-অর্থ এক জায়গায় করি। আসুন আমরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই। তরুণরা যেভাবে লড়াই করেছে, আসুন ঠিক একইভাবে পানিবন্দিদের পাশে আমরা দাঁড়াই।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ সাব্বির চৌধুরী রনির বাবা মো. মহিউদ্দিন বলেন, এখন আমার ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনি না। প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে রনি বলতো, বাবা মোটর ছাড়ো। গোসল করে বাইরে যাব। আমার নাস্তা রেডি করো… এখন আর কেউ সকালে বলে না নাস্তা রেডি করার কথা, আর মোটর ছাড়ার কথা। একটাই চাওয়া, আমার ছেলে যেন শহীদের মর্যাদা পায়।
শহীদ মো. হাসানের মা মোছাম্মদ আসমা বলেন, আমি ছয়মাস অসুস্থ ছিলাম। তখন ছেলে আমার দেখভাল করেছে। যদি আল্লাহ আমার বদলে আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখত, কোনো দুঃখ ছিল না। আমার ছেলে দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছে। আর কিছু চাওয়ার নেই, আপনারা আমার ছেলেকে শহীদের মর্যাদা দেবেন।
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আমার পাঠশালা স্কুলের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন, আমার পাঠশালা স্কুলের পরিচালক আবিদ হাসান রুবেল, সমন্বয়ক শীমা আক্তার, সমন্বয়ক ওমামা ফাতেমা, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভির বাবা আবুল হাসান প্রমুখ।