বিএনপি সচেতনভাবেই কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হয়নি। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার প্রথম থেকেই চেষ্টা করেছে এটাকে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করার। এরই অংশ হিসেবে সরকার আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন থেকে বলা শুরু করেছে, তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়েছে। এরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডিবি পুলিশের অভিযান, ক্রাইম সিন করা—এগুলো তারই অংশ। পরবর্তী সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়, এখনো হচ্ছে।
আজকে দেশের যে অবস্থা, গোটা পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী। কারণ, ছাত্র আন্দোলন যখন শুরু হয়েছিল, প্রথম থেকেই আমরা বলেছিলাম আলোচনা করে সমাধান করে ফেলার জন্য। তারা শোনেনি। বরং আন্দোলন নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ব্যঙ্গাত্মক বক্তব্য ছাত্রদের আরও উত্তেজিত করেছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পুলিশের অভিযান, যা ছিল ভয়াবহ। এরপরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে এটা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এটা হচ্ছে ছাত্র-জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। কোনো জবাবদিহি নেই, বাজারে জিনিসপত্রের লাগাম ছাড়া দাম—এসব ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সব মিলিয়ে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ছাত্র আন্দোলন দমন করতে সরকার শেষে কারফিউ দিল। শুরুতে সমাধান করলে এখন সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে হতো না। তাহলে আজকে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। অনেক জীবন চলে গেছে। সরকার এখন যেটা করছে, সেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বিএনপিকে দোষারোপ করছে। এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস।
কিন্তু সরকারের এত নির্মম হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন-নিপীড়নের পরেও আমরা লক্ষ করছি, প্রথম দিকে গণমাধ্যম যেভাবে খবরগুলো প্রকাশ করছিল, কারফিউ দেওয়ার পর থেকে মিডিয়াগুলো কেমন যেন সঠিক সংবাদ প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছে না।
আমাদের কাছে যতটুকু খবর, তাতে আন্দোলনকারীরা কোথাও অগ্নিসংযোগ করেনি, ঘটনাগুলো ঘটেছে বিক্ষোভকারীরা চলে যাওয়ার পরে। তাতে এটা পরিষ্কার যে এসব ঘটনা পরিকল্পিত। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ প্রতিরোধ করছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি