আমরা বলতাম ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’। সেটাকে বিকৃত করে কত বড় দুঃসাহস! ত্রিশ লাখ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশে বলে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’!
আক্ষেপের সুরে এ কথা বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আর বসে থাকার সময় নেই।আমাদের জীবদ্দশায় এত বড় ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলবে, এই দেশ নাকি রাজাকারদের! সেটা মেনে নেওয়া যায় না।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষাথীদের ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের’ প্রতিবাদে বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
কোটা আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিকৃত করেছেন উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং আরেকজন রাজাকারের সন্তান, দুইজনই যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় আপনি কাকে চাকরি দেবেন? তার উত্তরে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার এবং আদর্শের উত্তরাধিকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছেন, যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জীবন বাজি রেখে এই দেশকে স্বাধীন করেছেন সেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে চাকরি না দিয়ে কি আমি রাজাকারের বাচ্চাকে দেবো? এর চেয়ে সত্য কথা আর কি? এই সত্য কথাটা তিনি বলেছেন। সেটিকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আপনারা বলছেন যে তিনি সবাইকে রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বলেছেন, এ কথা প্রধানমন্ত্রী বলেননি।
‘এই মিথ্যাচার করে যারা বলেছে যে, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’। আমরা বলতাম, ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’। সেটাকে বিকৃত করে কত দুঃসাহস! ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশে বলে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’! অর্থাৎ তাদের আসল চরিত্র এটা তারা নিজেরাই প্রকাশ করেছেন। ’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, যত দিন আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমরা বলেছি, এদেশের নাগরিক হিসেবে একটা দাবি করতেই পারে। দাবি করা তো অন্যায় না। তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করতে পারে, কেউ বাধা দেয় নাই।
‘এরপরে যখন যখন বলল ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার…’ বলে তছনছ করল, সবকিছু ভাঙচুর করল, হলের গেট ভেঙে দিল; তারপরে আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে স্বাধীনতাবিরোধী সেই আল-বদর, আল-শামসের বংশধর যারা সেই ছাত্রশিবির এবং বিএনপির প্রেতাত্মা ছাত্রদলের ছেলেরা এবং বহিরাগতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ঢুকে কী তাণ্ডব চালিয়েছে। চট্টগ্রামে হলের ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের ছাত্রলীগের উদ্যোগে রাজু ভাস্কর্যে একটা সভা হয়েছে, সেখানে কী বলেছেন ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিরা? বলেছেন যে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো কথা নেই। এটা আপনারা করতে পারেন। তবে জনগণের জানমালের যাতে ক্ষতি না হয়, মানুষের জীবনযাত্রা যাতে ব্যাহত না হয় আমরা সেই ব্যাপারটা আবেদন করি। ’
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, তারাই (কোটা আন্দোলনকারী) প্রথম তাণ্ডব সৃষ্টি করে লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করেছেন। আমাদের ছেলেরা তো সংঘবদ্ধ ছিল না। স্বাভাবিক কারণেই আত্মরক্ষার্থে যার যার ব্যবস্থা করে।
আন্দোলনে ইন্ধন আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা চূড়ান্ত রূপ দেখেছি…, যেদিন ফখরুল সাহেব বললেন, আমরা যা করতে পারিনি ছাত্ররা তা করে দেখাচ্ছে। অর্থাৎ তারা আন্দোলন করে সফল হয়নি, তারা হচ্ছে। ইন্ধন দিলেন, উসকানিমূলক কথা বললেন। তারপর কালকের চিত্র দেখলেন কী অবস্থা। তাদের লাশ দরকার ছিল। আমেরিকার একজন বিবৃতি দিলেন যে দুইজন মারা গেছে। তখন কিন্তু কেউ মারা যায়নি। তারা অস্ত্র নিয়ে মিছিলের ওপর আক্রমণ করেছে। আওয়ামী লীগ কি কোনো কর্মসূচি পালন করেছে? শাপলা চত্বরে ছাত্রশিবির এবং জামায়াত রাস্তায় নেমেছে। বিএনপি রাস্তায় নেমেছে। মফস্বলে রাস্তায় নামানো হয়েছে। ওরা রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনটাকে নিয়েছে। আমরা কিন্তু রাজনৈতিকভাবে কখনই নেইনি।
তিনি বলেন, এখন আর নাটাই কোটাবিরোধী আন্দোলন যারা করে তাদের হাতে নেই, কাদের হাতে চলে গেছে? যারা একাত্তরে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধিতা করেছে তাদের হাতে গেছে এবং তাদের সেই প্রভু যারা সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল তাদের হাতে চলে গিয়েছে।
কাজেই আর বসে থাকার সময় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এই দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছি। আমাদের জীবদ্দশায় এত বড় দৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলবে, এই দেশ নাকি রাজাকারদের! সেটা মেনে নেওয়া যায় না।
মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী সারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারদের প্রস্তুত থেকে অপশক্তি যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থেকে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।