কর্মক্ষেত্রে মানসিক ক্লান্তি? জেনে নিন কারণ ও মুক্তির উপায়

কর্মক্ষেত্রে মানসিক ক্লান্তি? জেনে নিন কারণ ও মুক্তির উপায়

আমরা অনেকেই দীর্ঘ বা অল্প সময়ের জন্য হলেও মানসিক ক্লান্তিতে ভুগে থাকি। অনেকে ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে মানসিক ক্লান্তি অনুভব করে থাকেন।কাজ বা কাজের পরিবেশ, ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনা অথবা অন্যান্য নানা কারণে মানসিকভাবে চাপে থাকতে হয়। দিনের পর দিন একই রকম চলতে থাকলে শরীর ও মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, যার ফল মানসিক ক্লান্তি। এরকম চলতে থাকলে অনেক সময় কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠে অস্বস্তিকর।

এই রকম পরিস্থিতিতে কাজ তো আর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে মানসিক ক্লান্তি মুক্তির উপায় খুঁজে নিতে হবে। তবে তার আগে জানা দরকার মানসিক ক্লান্তি কেন আসে?

মানসিক ক্লান্তির কারণ কী?

১. কর্মক্ষেত্রে লক্ষ্যপূরণের চাপ

২. বিশ্রাম ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ

৩. কাজ নিয়ে অতৃপ্তি, চাহিদামতো বেতন না পাওয়া

৪. কাজের পরও পরিবারের দায়দায়িত্ব

৫. ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারা

৬. দীর্ঘ সময় ছুটি উপভোগ করতে না পারা

দিনের পর দিন চাপ নিয়ে জীবনে চলতে চলতে একটা সময় মানুষ মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করে শরীরেও। ক্রমাগত মন খারাপ থেকে কোনো কোনো সময় অবসাদও তৈরি হতে পারে। মানসিক চিন্তা ভাবনার জেরে হজমে সমস্যা, মাথা ব্যথা, খিদে কমে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, ওজন আচমকা কমে বা বেড়ে যাওয়া, ঘন ঘন অসুস্থ বোধ করার মতো লক্ষণ দেখা যায়। আচরণেও এর প্রভাব পড়ে। কারও সঙ্গে কথা বলতে ভাল না লাগা, পছন্দের কাজ করতেও ইচ্ছে না করা, নেশায় ডুবে গিয়ে ক্লান্তি থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা।

মুক্তির উপায়?

১। ছুটি
মানসিক ক্লান্তি থেকে মুক্তির প্রথম উপায় ছুটি। সেটা যদি লম্বা ছুটি না–ও হয় অন্তত একটা দিনের ছুটি। সেদিন কাজ দূরের কথা, কাজের কথা ভাবলেও চলবে না। সমস্যা বেশি মনে হলে, কিছু দিনের ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসা দরকার। মানসিক ক্লান্তি থেকে মুক্তির এর চেয়ে ভাল উপায় আর হয় না।

২। অতিরিক্ত চাপ কমানো
কেন কাজে অতিরিক্ত চাপ হচ্ছে, সেটি বুঝে চাপ কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে কোন সময় কীভাবে কাজ করলে সুবিধা হতে পারে, সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে টানা কাজ না করে মাঝেমধ্যে একটু বিশ্রাম নেওয়ার।

৩। মনকে শান্ত করা
খুব ক্লান্ত লাগলে অন্তত্য ১০ মিনিট সময় নিয়ে টানটান হয়ে বসে গভীরভাবে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। এই প্রক্রিয়ায় মন একটু শান্ত হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করতে নিয়ম করে কিছুক্ষণ প্রাণায়াম করুন। প্রাণায়াম বলতে বোঝায় মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ। প্রাণের দীর্ঘতাই প্রাণায়াম। সঠিক নিয়মে শ্বাস নেওয়া, ধারণ এবং ত্যাগকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমই প্রাণায়াম। মাস খানেক প্রাণায়াম অভ্যাস করলেও মনের পরিবর্তন সামান্য হলেও বোঝা যাবে।

৪। বডি মাসাজ
শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করতে মাসাজ খুবই কার্যকর। পুরো শরীর, মাথা বা পায়ে মাসাজ করালে স্নায়ু ও মাংসপেশি ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যায়। এতে আরামবোধ হয়, ভালো লাগে।

৫। ঘুম
অত্যধিক চাপ থাকলে ঘুমের সমস্যা হয়। পাশাপাশি প্রচুর কাজের চাপে যথাযথ ঘুমের সুযোগ হয় না। ৮ থেকে ৯ ঘণ্টার টানা একটা ঘুম খুব জরুরি। ভালো করে ঘুম মানসিক ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।

৬। নিজেকে সময় দেওয়া
একজন মানুষের কাজের বাইরে নিজের জন্য সময় দরকার হয়। ভালো থাকার জন্য মনকেও গুরুত্ব দিতে হয়। কিছুটা সময় নিজের জন্য ব্যয় করতে হবে। নিজের ভালো লাগার কাজগুলি করুন। ভালো গান শোনা, বাইরে খেতে যাওয়া, পছন্দের সিনেমা দেখা, খেলা দেখা ইত্যাদি।

৭। বাইরে গিয়ে শরীরচর্চা
যদি সম্ভব হয় খোলা জায়গায় হাঁটুন, হালকা ব্যায়াম করুন। সকালে হাঁটতে না পারলে বিকেলে সময় বের করে অফিসের চত্বরে বা রাস্তাঘাটেই হেঁটে নিন। খোলা হাওয়ায় বের হলে মন ভালো হবে। ক্লান্তি দূর হলে কাজ করতেও সুবিধা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS