জেলার চরাঞ্চলে হঠাৎ রাসেলস ভাইপারসহ বিভিন্ন বিষধর সাপের কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। চর এলাকার অধিকাংশ মানুষ তেমন সচেতন না থাকায় সাপে কাটা রোগীকে নিয়ে স্বজনরা ছুটছে ওঝার বাড়িতে।কেউবা হাসপাতালে আসছে অনেকটা সময় পেরিয়ে। ফলে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম থাকলেও প্রচার প্রসার না থাকায় সেবা নিতে আসছেন না, আবার কেউবা জেলার বাইরে চলে যাচ্ছেন। এতে সময়ের কালক্ষেপণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে আসলেই মিলছে চিকিৎসা; সরকারি হাসপাতালগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম।
সাপে কাটা চিকিৎসার একমাত্র ওষুধ অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন। কোনো কোনো রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ডাক্তাররা এ ইনজেকশন পুশ করার ঝুঁকি এড়িয়ে যান। রোগী মারা গেলে ঝামেলার ভয়ে। তাই কিছু কিছু সময় রোগীকে অন্যত্র রেফার্ড করে দেন।
রোববার (২৩ জুন) ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর এলাকার গৃহবধূ সুরাইয়া আক্তার (২৫) প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে তাকে বিষধর সাপে ছোবল দেয়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ড ভর্তি করেন। সেখানে থেকে তিনি সুস্থ হন।
ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স কল্পনা রানী মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সাপে কাটা রোগীদের প্রতি অধিক যত্নশীল। তাইতো সাপে কাটা রোগী সুরাইয়া আক্তারকে হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। তবে রোগীর দেহে বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পরে তাকে ২৪ ঘণ্টার অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। এখন তিনি সুস্থ।
একই হাসপাতালে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গত ২২ জুন ভর্তি হন ফরিদপুর সদরের সাদীপুর এলাকার খালেক ব্যাপারীর মেয়ে সামিরা। সেখানে গত ২০ জুন ভর্তি হয়েছিলেন ফাল্গুনী (২০) নামে আরেক সাপে কামড়ানো রোগী। অ্যান্টিভেনম পুশ ও চিকিৎসা শেষে সুস্থ হলে তাদের রোবার ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
সাপে কাটা পর হাসপাতালটিতে শহিদুল মণ্ডল (৪০) নামের এক কৃষকও ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, মাটির ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। রাতে পায়ে সাপে কামড়ায় বলে মনে হয়েছে। তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন আমি সুস্থ।
ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স পুতুল বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন তিন-চারজন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক দীপক কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই হাসপাতালে না এসে যাচ্ছেন ওঝার কাছে। এ রকম অপচিকিৎসা না দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কাছে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম। দ্রুত চিকিৎসা দিতে পারলে প্রাণে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আমাদের চিকিৎসকরাও সাপে কাটা রোগীর ব্যাপারে খুব যত্নশীল।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ফরিদপুরের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন রয়েছে। অ্যান্টিভেনমের কোনো ঘাটতি নেই। এ ইনজেকশনগুলো হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, সাপ আতঙ্ক ও সাপে কাটার বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতনতা বাড়াতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া চরাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে এক হাজার গাম্ববুট বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ফরিদপুরের প্রতিটা হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।