পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছেন হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই কর্মসূচি শেষে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিতে যান।
পুরান ঢাকার বংশালের আগাসাদেক রোডের পাশে মিরনজিল্লা কলোনিতে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে আসছেন। মিরনজিল্লার একটি অংশের আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ জন্য সেখানে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করতে ১১ জুন গিয়েছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তাঁরা হরিজন সম্প্রদায়ের তীব্র আপত্তি ও বাধার মুখে পড়েন। পরে তাঁরা একটি দেয়াল ও কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে চলে যান। এরপর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তাঁদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন।
আজ শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের সিংহভাগ বাসিন্দা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করেন। তাই তাঁদের অনেকেই বাসা ভাড়া দিতে চান না। ৪০০ বছর ধরে তাঁরা মিরনজিল্লায় বসবাস করে এলেও এখন তাঁদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা চলছে। পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি জানান তাঁরা।
বক্তারা আরও বলেন, সরকারের সম্পত্তিই জনগণের সম্পত্তি। হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের অধিকার নিশ্চিত না করে তাঁদের উচ্ছেদ করা যাবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা।
বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের অঙ্গসংগঠন যুব ঐক্য পরিষদ ও ছাত্র ঐক্য পরিষদ এই সভার আয়োজন করে। এতে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এই কর্মসূচিতে হরিজন সম্প্রদায়ের স্কুলশিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাক পরে জাতীয় পতাকা হাতে অংশ নেয়।
সমাবেশ শেষে বেলা পৌনে একটার দিকে তাঁরা স্মারকলিপি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে হরিজন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে যান।
যুব ঐক্য পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাজেশ বাসফোরের সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার রায়, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী সভাপতি জাকির হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ সূত্র বলছে, মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে করপোরেশনের প্রায় ৩ দশমিক ২৭ একর জমি আছে। কলোনির এক পাশে ২৭ শতাংশ জমিতে আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ করতে হলে সেখানকার কিছু বাসাবাড়ি ভেঙে দিতে হবে। আগে বিদ্যমান কাঁচাবাজারটি ১৭ শতাংশ জমিতে ছিল। বাকি জমি থেকে স্থাপনা সরাতে এই অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মিরনজিল্লা কলোনিতে বসবাসরতদের মধ্যে যাঁরা সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, তাঁদের নতুন ভবনে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা বলছেন, সেখানে চার শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। এদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ জনকে নতুন বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।