জনগণকে রক্ষা নয়, তারেক রহমানকে শাস্তি দেওয়াই সরকারের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সোমবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের জবাবে এ মন্তব্য করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবিতে এ মানববন্ধন হয়।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জিয়াউর রহমানকে মারা হয়েছে। আরাফাত রহমান কোকো বিদেশে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে মৃত্যুরমুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। জিয়া পরিবারের আছেন শুধুমাত্র তারেক রহমান। জিয়া পরিবারকে এতই অপছন্দ যে তাকে দেশে এনে শাস্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, কী অপরাধ তারেক রহমানের। একজন বিচারক তাকে একটি মামলায় খালাস দিয়েছিলেন। ওই বিচার পরে দেশে থাকতে পারেননি। এসকে সিনহার মতো তাকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। উচ্চআদালতে নিয়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি মামলার এজাহারসহ কোথাও তারেক রহমানের নামই ছিল না। একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কমকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ, তিনি তার এলাকায় নৌকা মার্কার ব্যানার লাগিয়ে প্রচারণা করছিলেন। তাকে সেখান থেকে এনে উচ্চতর পদে নিযুক্ত দিয়ে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলো। এ কাহার আকন্দ মুফতি হান্নানকে ১০০ দিনের বেশি রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করে তাকে দিয়ে তারেক রহমানের নাম বলানো হলো। সে মামলায় বিদেশে থাকা অবস্থায় সাজা দেওয়া হলো। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি। মুফতি হান্নান ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দিতে বলেছিল তাকে জোর করে এটা কারানো হয়েছে। আবার এ মামলার রায়ের আগেই কেন এত গুরুত্বপূর্ণ আসামিকে অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর করা হলো?
তিনি বলেন, তারেক রহমানের ওপর মূল রাগের কারণ হচ্ছে, তারেক রহমান আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনকে বেগমান করেছে, জোরদার করেছে। দেশের ইতিহাসে তারেক রহমান দেশের ডান, বাম, সমাজতান্ত্রিক, ইসলামপন্থি সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রের পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। দেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটও দেননি।
তিনি বলেন, এজন্য ঘূর্ণিঝড়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, টাকার অবমূল্যায়ন, দুর্নীতি, অনাচার, মানবাধিকার হরণ, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকলুট, রাষ্ট্রীয় দেনা বৃদ্ধি, সাবেক সেনা ও পুলিশ প্রধান আন্তর্জাতিক স্যাংশনের মুখে পড়ার পরও সেগুলো কোনোটাই মূল কাজ নয়। মূল কাজ তারেক রহমানকে এনে শাস্তি দেওয়া।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বাকশালের বিরুদ্ধে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এ সরকার যে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, পুনরায় তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব। আমি বলতে চাই তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে না। তিনি নিজেই আসবেন। তিনি আসবেন বীরের বেশে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা দেশের অর্থনীতি একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছেন যত ঋণ নিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ সুদ হয়েছে ওই সুদ পরিশোধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আপনার সরকারের পাপের সুদসহ আপনার যে বিচার হবে ওই বিচারের জন্য আপনি প্রস্তুত থাকেন। তারপরে আপনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কথা বলবেন। আপনার ছাত্রলীগ ডাকাতি করে আপনার ছাত্রলীগ নারীর শ্লীলতাহানি করে আপনার যুবলীগ টেন্ডারবাজি করতে নিজের ছেলেদেরকে ১৬-১৭ বছরে প্রায় ৫০ জন লোককে হত্যা করেছে। এ পাপগুলোর জন্য কি এদেশের আইনে বিচার হবে না?
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন,যাদেরকে আপনি এমপি বানিয়েছেন তারাই তো টাকাগুলো পাচার করেছে তাদেরই প্রতিপক্ষ কলকাতায় কয়েক টুকরা করে কোন খালে বিলে ফেলেছে এখন খুঁজে পাচ্ছেন না। এরা এমপি হয় কি করে? এর দায় তো আপনার প্রধানমন্ত্রী। আপনি মাফিয়া, আপনি ডাকাত আপনি খুনিদেরকে এমপি বানিয়েছেন। এর দায় কি আপনার ওপর নেই? এ ভয়ংকর পাপগুলো কি এমনি চলে যাবে? এমনি পার পেয়ে যাবেন?
তিনি বলেন, ফেরাউনও মনে করেছিল সে পার পেয়ে যাবে ফেরাউন তো পার পায়নি, নমরুদ তো মনে করেছিল সে নিজেই ঈশ্বর কিন্তু সেই নমরুদের নাকে মশা ঢুকেছিল সেই মশাটাই সে নাক থেকে বের করতে পারিনি। হিটলার ও মনে করেছিল তিনি গোটা পৃথিবীতে শাসন করবে সেই হিটলারের আর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, গত ৭ জানুয়ারি তারেক রহমানের আহ্বানে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভোট বর্জন করেছে। ফলে তারেক রহমান এ দেশের ৯৫ ভাগ জনগণের নেতা। অপর দিকে, ৫ ভাগ মানুষের সরকার প্রধান হচ্ছেন শেখ হাসিনা। গতকাল তিনি দেশের ৯৫ জনগণের নেতাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন; মানে দেশের মানুষকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। সেদিন আর বেশি দূরে নয় গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ, দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য এ সরকারের বিচার এদেশের জনগণ করবে।