সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (২০২৪-২৫) নির্বাচনে দুদিন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের একদিন পার হলেও ভোট গণনা করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দিনগত রাতে ভোট গণনার প্রাক্কালে আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে মারাধর ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।এতে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তবে নির্বাচন উপকমিটি বলছে ব্যালট সিলগালা অবস্থায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে আছে। পরবর্তী গণনা করে ফল ঘোষণা করা হবে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ভোরে আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে হট্টগোল, বাদানুবাদ,ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখায় যায়, মিলনায়তনের ভেতরে কয়েকজন লোক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফকে মারধর করতেছেন। আর তিনি দৌড়ে মারধরের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। পরে তিনিসহ আরও একজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তবে রাতে ভোট গণনা করা এবং না করা নিয়ে এ বিরোধের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক আইনজীবী। তিনজনের মধ্যে দুইজন সম্পাদক প্রার্থী রাতেই ভোট গণনা চান। এরপর ভোট গণনা শুরু হয়। কিন্তু অপরজন দিনের আলো তথা শুক্রবার (৮ মার্চ) বিকেল তিনটায় গণনা চান।
এ নিয়ে মিলনায়তনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে। পরে নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের একটি ঘোষণা দেন। এতে নাহিদ সুলতানাকে (যুথী) সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেন।
তবে আবুল খায়ের শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, ভোট গণনা হয়নি। ব্যালট সিলগালা অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে আছে। ভোট গণনা করে দু-একদিনের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। ভোট গণনার পর যিনি জিতবেন তিনি সম্পাদক হবেন। আশা করছি কাল ভোট গণনা হবে।
বিএনপি সমর্থক সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক হঠাৎ একজনকে সম্পাদক ঘোষণা করলেন। সমিতি থেকে ব্যালট বাক্স হাওয়া হয়ে গেল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিউজ এসেছে কে বা কারা ব্যালট বাক্স নিয়ে চলে গেছে। এখন ফলাফল ঘোষণা করলে সেটা হবে আরেকটি নতুন নাটক।
প্রায় আট হাজার ভোটারের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২০২৫ সেশনের দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনের প্রথমদিনে ভোট পড়েছিলো তিন হাজার দুইশত ৬১টি। শেষ দিনে পড়েছে দুই হাজার ৫৮ ভোট। সব মিলিয়ে ভোট পড়েছে পাঁচ হাজার ৩১৯ টি।
কার্যকরী কমিটির সভাপতি পদে একটি, সহ-সভাপতি পদে দুটি, সম্পাদক পদে একটি, কোষাধ্যক্ষ পদে একটি, সহ-সম্পাদক পদে দুটি এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে সাতটিসহ সর্বমোট ১৪টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নির্বাচনে সাধারণত সরকার সমর্থক (সাদা) ও বিরোধীদের (নীল) প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার সরকার সমর্থকদের প্যানেলের সিদ্ধান্তের বাইরে সভাপতি ও সম্পাদক পদে আরও দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ও মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান)। সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথী ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া এবং মো. সাইফুল ইসলাম কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) মনোনীত প্যানেলের প্রার্থীরা হচ্ছেন, সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির।
সদস্য সাতটি পদে প্রার্থী হচ্ছেন, মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, মাহমুদা আফরোজ, মো. বেলাল হোসেন, খালেদ মোশাররফ, মো. রায়হান রনি, সৌমিত্র সরদার ও রাশেদুল হক খোকন।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) প্রার্থীরা হচ্ছেন, সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন), সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস, সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও সরকার তাহমিনা বেগম, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান ও মো. আব্দুল করিম প্রার্থী হয়েছেন।
সদস্যের সাতটি পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহী, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল প্রার্থী হয়েছেন।