দুবাইয়ে বাংলাদেশির প্রাণের মূল্য মাত্র ৩৫ হাজার টাকা!

দুবাইয়ে বাংলাদেশির প্রাণের মূল্য মাত্র ৩৫ হাজার টাকা!

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে সাইকেল চালানো অবস্থায় একটি গাড়ি ধাক্কায় সাইফুল ইসলাম (৪১) নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হন।

গত ২৮ জানুয়ারি দুবাইয়ের ৮ বুলেভার্ড ওয়াকের একটি সুপার মার্কেটের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘাতককে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মৃত্যুর পর ২৭ দিন পেরিয়ে গেলেও সাইফুলের মরদেহ দেশে আনা যায়নি। তার লাশ দুবাইয়ে মর্গে পড়ে আছে।

কারণ, দুবাইয়ে সাইফুল যে প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।  সেখানের কর্তৃপক্ষ মাত্র ১ হাজার ২০০ দিরহামে তথা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৫ হাজার টাকায় মরদেহ দেশে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে।

এতে আগ্রহ না দেখিয়ে যথাযথ ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে তার মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানো দাবি জানিয়েছে সাইফুলের পরিবার।  

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

সাইফুলের চাচাতো ভাই সাইফুদ্দিন বর্তমানে দুবাইয়ের আল কোওজে একটি নৌকা তৈরির কোম্পানিতে কাজ করছেন। সেখানে সাতওয়া এলাকায় থাকেন তিনি।

সাইফুলের মরদেহ মর্গে পড়ে থাকার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, পরিচ্ছন্নতা সংস্থাটি সাইফুলের বকেয়া পরিশোধ না করেই তার লাশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতক্ষণ না তারা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দেবে ও আমার ভাইয়ের পাওনাদি না মেটাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা লাশ পাঠানোর অনুমতি দেব না।

তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, সাইফুল তার জীবনের এক বছরেরও বেশি সময় ওই পরিচ্ছন্নতা সংস্থায় চাকরি করেছে। তার জীবনের মূল্য কি মাত্র ৩৫ হাজার টাকা! 

এক হাজার ২০০ নয়; কমপক্ষে দশ হাজার দিরহাম পাবেন নিহত সাইফুলের পরিবার – এমনটা জানিয়েছেন বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ফার্স্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান।  

খালিজ টাইমসকে এ কনস্যুলেটের বলেছেন, কনস্যুলেটের শ্রম শাখা বিষয়টি তদন্ত করছে। সাইফুল যদি বৈধভাবে দুবাইয়ে এসে থাকেন এবং যদি জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে এ ব্যাপারে তথ্য থাকে (বিএমইটি কার্ড) তবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার পরিবারকে ১০ হাজার দিরহাম তথা তিন লাখ টাকা দিতে হবে প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়া মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে যে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হবে সেটিও ওই প্রতিষ্ঠান দেবে।

এদিকে সাইফুলের মরদেহ কবে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে সেই অপেক্ষায় অস্থির অবস্থায় নিহতের স্ত্রী ও তার ছোট দুই সন্তান।  

খালিজ টাইমসের কাছে সাইফুলের স্ত্রী জেসমিন তার যন্ত্রণা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, সাইফুলের নিয়োগকর্তার কাছ থেকে মাত্র এক হাজার ২০০ দিরহাম পেয়েছি। এই অর্থই আমাদের শেষ সম্বল। এই টাকা দিয়ে আমি কীভাবে স্বামীর মরদেহ আনব আর কীভাবে আমার ছোট দুই সন্তানকে বড় করব? আমার স্বামী একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। আমরা একেবারেই দিশেহারা এখন।

এদিকে, ৮ বুলেভার্ড ওয়াকের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা সাইফুলের বিধবা স্ত্রীকে আর্থিক সহায়তা দিতে সমাবেশ করেছেন।  

ন্যায়বিচারের আশা প্রকাশ করে সমাবেশে তারা বলেছেন, আমরা চাই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত করুক কর্তৃপক্ষ এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ (ব্লাড মানি) আদায় করা হোক।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS