ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা না পেরোতেই চিকিৎসকরা প্রমোদ ভ্রমণে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ৩৫ জন চিকিৎসক হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম অনেকটা অচল করে বেড়াতে যান।তারা পরিবার পরিজন নিয়ে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি পাহাড়ে পাঁচ তারকা একটি রিসোর্টে যান। মোট চিকিৎসক রয়েছেন ৬৮ জন। এর মধ্যে ৪৪ জন এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত। বাকি ২৪ জন সংযুক্ত রয়েছেন।
গত রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ৩টার দিকে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহিদুজ্জামানের মৃত্যু হয়। এরপর দুদিন না পেরুতেই মঙ্গলবার প্রমোদ ভ্রমণে যাওয়ায় শহর জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অফিসে কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর দুদিন না যেতেই চিকিৎসকরা হাসপাতালের কার্যক্রম অনেকটা অচল করে এ আনন্দ ফুর্তির আয়োজন করায় মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক স্যারের মৃত্যুর পর চিকিৎসকদের বেড়াতে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। মঙ্গলবার সকালে ২৫ জন চিকিৎসক পরিবার পরিজন নিয়ে রিসোর্টের উদ্দেশে রওনা হন আর দুপুরে রওনা হন আরও ১০ চিকিৎসক। চিকিৎসক ও তাদের পরিবার পরিজন মিলে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ একটি রিসোর্টে যান। সেখানে সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুটির দিনটি রিসোর্টে কাটিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের একজন স্টাফ জানান, প্রতিবার পিকনিকের আয়োজন হলে জানতাম, কিন্তু এবার কৌশলে প্রমোদ ভ্রমণে গেছেন চিকিৎসকরা।
তিনি জানান, ২৫০ শয্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন চিকিৎসকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতেন তত্ত্বাবধায়ক। চিকিৎসকরা কর্মবিরতি, অসহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে তত্ত্বাবধায়কের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু তিনি নীতিতে অটল ছিলেন। আপোষ করেননি। হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে চিকিৎসক ও স্টাফদের ছাড় দেননি। আমূল পরিবর্তন ঘটান তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের। এসব ঘটনায় কিছু চিকিৎসক তা মেনে নিতে পারেননি।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দীর্ঘকাল ধরে কর্মরত হাসপাতালের আরএমও ডা. রানা নূরুস সামস ও আরএমও ডা. ফায়েজুর রহমানকে গত মঙ্গলবার বিকেলে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. ফাইজুর রহমান বলেন, আমি ও আরএমও ডা. নূরুস সামস বদলির আদেশ পেয়েছি। আমরা এখন ঢাকায় আছি। বেড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর বলেন, অফিস খোলার দিন এতো চিকিৎসক বেড়াতে যাওয়ায় রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এটা ঠিক হয়নি। এছাড়া হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মৃত্যুর দুদিনের মাথায় এ ধরনের আনন্দ আয়োজন নিঃসন্দেহে অমানবিক। হাসপাতালের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ জানান, চিকিৎসকদের বেড়াতে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এটি হাসপাতালের কিংবা বিএমএর কোনো ভ্রমণ ছিল না। শুনেছি কেউ কেউ গিয়েছে, সবাই যায়নি। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের চিকিৎসায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। সির্ভিল সার্জন হিসেবে বলতে পারি, প্রতিটি হাসপাতালেই যাতে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে আমার নজরদারি থাকবে।